শহরের ডাক্তার এসে দু’দিন দেখে গেছেন। কিছু ঔষধ কলিকাতা থেকে আনাতে হবে। দেখা যাক কবিরাজরা কী বলেন। যে ব্যক্তি একটা দিনও ঘরে অলস বসে থাকার নন তিনি যদি সারাটা মাস দরজা বন্ধ করে চোখ বুজে বসে কাতরাতে থাকেন তবে গ্রাম শহর সর্বত্র কানাঘুষো হবেই। এরই মাঝে একদিন কালাইনের অভয়চরণ দেশমুখ্য কর্তা দেখতে এলেন। তিনি সচরাচর কোথাও যান না। গম্ভীর হয়ে অনেকক্ষণ বসে বলে গেলেন ন্যায়পঞ্চানন কবিরাজ মশাইকে আজই খবর দেওয়া হোক। শহর থেকে যোগেন্দ্র উকিল এসেছিলেন কাছারিতে কয়েকটি নালিশের প্রসঙ্গে আলোচনা করতে। রায়বাহাদুর রইলেন নির্বাক। নায়েব নবকিশোর সেন ভয়ে কাছে আসতেই পারছেন না। অনেকগুলো দলিল এবং মোক্তারনামায় দস্তখত করার ব্যাপার ছিল। কিন্তু কে যাবে সামনে? প্রভুভক্ত মোবেশ্বর আলি বারান্দার নীচে সর্বক্ষণ একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে হুকুমের অপেক্ষায়। কিন্তু ওদিক থেকে কোন সাড়াশব্দ নেই। গত তিরিশ বছর এ বাড়িকে এত নিরাই ঝিম্বরা অবস্থায় সে দেখেনি। গাছের পাখি, বাথানের গরু মহিষ, এমনকি গাছের পাতারাও বুঝি জেনে গেছে এ বাড়ির নীরবতা এখন ভাঙার সময় না।
বারান্দায় দাঁড়ানো মোবেশ্বরের চোখে একবার চোখ পড়ে যাওয়াতে ওইদিক থেকে ইশারা। চৌকাঠের সামনে দাঁড়িয়ে ‘জি বাবু’ উচ্চারণ করতেই রায়বাহাদুর অনেক কষ্টে বললেন, ‘যতি’। মোবেশ্বর আলির মাথায় বাজ পড়ল। এই সময় এই বাবুর নাগাল পাওয়া কি কম মেহনতের কাম? কোথায় গিয়ে ধরবে এই বাবুকে? বুড়াবাবুর শ্রাদ্ধশান্তি শেষ হইলে পর তো এক্ষেণে এই বাবু লাগামছাড়া ঘোড়া। কোন সময় কোন বিদেশি মানুষ আইয়া ধরিয়া কই যে লইয়া যায় কে জানে। ঘরর এইনর কুনও নিষেদ বুদ অয় বিলকুল মানইন না। আইজ কাটিগড়া, কাইল তাপাং, এর বাদে