বিন্নাকান্দি, উধারবন্দ, সাবাজপুর, বাঁশকান্দি—এই তো চক্কর। পাগলের মতো মোবেশ্বর আলি ঘর থেকে বেরোলো। তাঁকে আজ যে করেই হোক যতিবাবুর কাছে পৌঁছাতেই হবে। হাজির করাতে হবে রায়বাহাদুরের সামনে। আইজ বড়ো মুসিবত এই পরিবারর উপরে।
কনিষ্ঠ ভ্রাতার কানে সবই গেছে, কিন্তু তলে তলে জল যে এত দূর গড়িয়েছে তা বিশ্বাস হচ্ছে না।
ভগ্নীপতি যোগেন্দ্র কর, পুরোহিত চক্রবর্তী মশাই, পুবের বাড়ির নায়েব গগন মজুমদার, লক্ষীপুর মৌজার সেরেস্তাদার, সারদা ফরেস্টার আর বাজারের মহাজনগোষ্ঠীর অনেকেই আজ রায়বাহাদুরকে দেখতে এসেছেন। যতিবাবু ঘরে ঢুকতেই ভিড় একটু হালকা হল। যোগেন্দ্র কর সামনে ঝুঁকে বললেন,
—যতিকে কিছু বলবেন? আমরা বাইরে যাই।
রায়বাহাদুর খুব মৃদু স্বরে দু’বার ‘যতি’, ‘যতি’ বলে ডাকলেন। সামনের চেয়ারটা একেবারে কাছে টেনে কনিষ্ঠ ভ্রাতা ঝুঁকে পড়লেন। রায়বাহাদুরের এত কাছে কোন দিন তাঁর বসা হয়নি। কয়েকটি ছেঁড়া ছেঁড়া বাক্য উচ্চারিত হল,
—তোমার উপর অনেক বোঝা...। পরিবার, গ্রাম, প্রজা ছাড়াও আরও অ-নে-ক কিছু। সামলাতে হবে। অনেক দিক... ওইদিকের।
অনেক কষ্টে কথাগুলো বলে হাঁফাতে লাগলেন। বিচক্ষণ ভ্রাতার বুঝতে অসুবিধা হল না, ওইদিকের মানে সিলেট-শিলঙের সব কানাঘুষো তাঁরও কানে এসেছে।
তিনি কী আর বলবেন?
—আগে আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন দেখি, তখন সব কথা হবে। আমি আর বসলে আপনার বিশ্রামের ব্যাঘাত হবে।