কিন্তু রায়বাহাদুরের যেন আরও কিছু বলার আছে। হঠাৎ যেন তাঁর প্রচণ্ড ক্রোধ হল। বেশ উষ্মার সঙ্গে নিমাতার সেবা, মন্দির, নিমাতার সম্পত্তির কথা প্রসঙ্গে বললেন,
—জাগ্রত দেবী মা নিমাতা। পরিবারের উপর বিপর্যয় আসবে যদি... এ পর্যন্ত বলে হাঁফাতে লাগলেন।
যতীন্দ্রমোহনকে কেউ কোনওদিন বিচলিত হতে দেখেনি। কিন্তু বিচলিত হবারই কথা এগুলো। মৃত্যুপথ যাত্রী ব্যক্তিটির আশঙ্কার জায়গাটি কোথায়? নিমাতার সম্পদ কি কোথাও অরক্ষিত রয়েছে? তিনি তো এদিকে দৃষ্টিপাতই করেননি কোনওদিন। এখন মনে হচ্ছে কোথাও একটা বড়ো রকমের গণ্ডগোল রয়ে গেছে।
রায়বাহাদুরকে আশ্বস্ত করে তিনি বললেন,
—আপনি এ সব নিয়ে অযথা চিন্তা করবেন না। কেউ কিছু নষ্ট করতে পারবে না। আপনি আজ অনেকক্ষণ কথা বলেছেন। আমরা বসলে আরও বলবেন। আমি বরং রোজ একবার এসে আপনাকে দেখে যাব, আপনার সব কথা শুনব।
রায়বাহাদুর হাতের ইশারায় নবকিশোর সেন মশাইকে ডাকলেন। কাঠের আলমারির দিকে আঙুল দেখাতেই তিনি ভেতর থেকে বের করলেন কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট। শয্যাশায়ী বিপিনচন্দ্র মোড়কটি খুলে প্রিয় ভ্রাতার হাতে তুলে দিলেন একটি বই। যতীন্দ্রমোহন পাতা উলটে দেখেন ইংরেজিতে লেখা To Babu Jatindra Mohan। নীচে ইংরেজিতে একটা সই। অগ্রজর হাত থেকে এটাই তাঁর প্রথম উপহার। যতীন্দ্রমোহনের চক্ষু ঝাপসা হয়ে গেল। বই বন্ধ করতেই আখ্যাপত্র স্পষ্ট হল, ‘হেড়ম্ব রাজ্যের দণ্ডবিধি’।