—আমি বলি, পণ্ডিতমশাই, পুথিটি আমি যদি আনিয়ে নিই?
—না না, তা হয় না। আমি পত্র দিয়ে জানিয়েছি। তাছাড়া মালিকের সঙ্গে কিছু আলোচনাও তো জরুরি।
অনেক সাধ্যসাধনায় পণ্ডিতপ্রবরকে সেইদিনের জন্য বিরত করা গেল। বিপিনবাবু আসলে আজ রাত বিদ্যাবিনোদের সান্নিধ্য চাইছিলেন। পণ্ডিতমশাই অবশ্য তাঁর ‘সুবঙ্গ বিষয়া’ অভিযানের কথা মনে করিয়ে দিলেন। ঢাকার তরুণ ছাত্র নলিনীকান্ত ভট্টশালি ঠিক এই স্থানে বঙ্গ-সমতটের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রাচীন এক ইতিহাসের সূত্রের কথা শুনিয়েছেন।
—এসেছি যখন দেখে যাব ওই দিকটা।
সন্ধ্যার অবকাশে অন্তরঙ্গ আলাপে বসে বিপিনবাবু বললেন,
—আজ্ঞে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই, যদি অনুমতি দিন।
বিদ্যাবিনোদের সহাস্য উত্তর,
—আপনি দেশের জমিদার, হেড়ম্বরাজমন্ত্রী বংশ-সম্ভূত সর্বজনমান্য ব্যক্তি। আপনাদের কথা বলতে অনুমতি লাগে, এমন তো ভাবি নাই।
বিপিনবাবুর প্রস্তাব হল, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মহামহোপাধ্যায় পদ্মনাথ ভট্টাচার্য বিদ্যাবিনোদ মহোদয়ের কাছাড় ভ্রমণের যাবতীয় খরচা তিনি বহন করবেন। যদি কোনও গ্রন্থ প্রকাশ করতে মনস্থ করেন বিদ্যাবিনোদ মহাশয়, তবে এর ব্যয়ভারও তিনি বহন করতে চান। খাসপুরে পরিত্যক্ত রাজবাড়ি, রাজন্যবর্গের অভিজ্ঞানসমূহ, বাসনপত্র, পূজার সামগ্রী, পুথিপত্র ইত্যাদির তৈলচিত্র, লিপিকর, নকলনবিশের দক্ষিণা বাবত সমস্ত খরচাপাতি সহ গ্রন্থপ্রকাশের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করবেন। অতি বিনীত ভাবেই বিপিনবাবুর নিবেদন,
—দয়া করে এটুকু পুণ্য সঞ্চয় করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না আমাকে।