মহাশয়ের মুখেও কিছু কথা শুনেছেন। এক সাহিত্য সভায় ইতিহাস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ পণ্ডিতপ্রবর ইন্দুপ্রভাকে ‘কাছাড়ের ক্লিওপেট্রা’ বলেই অভিহিত করেছিলেন। প্রাচীনেরা বলতেন ‘তুমি যদি প্রভাতী সোনালী সূর্যের রক্তিম আভা দেখতে চাও, তবে বসন্ত বা শরতের অপেক্ষায় না থেকে রানি ইন্দুপ্রভার দিকেই তাকাও। আর যদি গ্রীষ্মকালীন পূর্ণিমায় চাঁদের কিরণে স্নাত হতে চাও, তবে তিথি নক্ষত্র গুণে আর বৃথা কালক্ষেপের প্রয়োজন নেই, রানি ইন্দুপ্রভার সান্নিধ্য প্রার্থনা কর।’
এ হেন পরমাসুন্দরী, বৈষ্ণবী ইন্দুপ্রভার সংস্পর্শে এসে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত মহারাজের বিকাশ ঘটল কবিত্বশক্তির। পিতৃপুরুষের ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন পরম বৈষ্ণব। রাজ্যের অস্ত্রভাণ্ডারে জমে উঠল ধুলার আস্তরণ, কামারদের নিয়মিত অস্ত্র শান দেওয়ার শব্দ হল স্তব্ধ, সিপাইসাস্ত্রিদের নিয়মিত রাজ্যপরিক্রমণও বন্ধ। ঘোড়সওয়ার প্রতিরক্ষা কর্মীদের এখন অনন্ত বিশ্রাম। নীরব রণচণ্ডী মন্দিরে বাজে না বলির বাদ্য। রাজকীয় প্রমোদ উদ্যান থেকে এখন দূর দূরান্তে ভেসে যায় মৃদঙ্গের বোল প্রেমিক সম্রাটের কণ্ঠে উচ্চারিত হল সুললিত পদাবলি। মধুর প্রেমরসে মধুরার তীর হয়ে উঠল বৃন্দাবনের রাসস্থলী। লীলামৃত রসে বিভোর মহারাজ শ্রীগোবিন্দচন্দ্র রাজধানীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা শীর্ণ জলধারাকেই স্রোতস্বিনী কলিন্দ্রী ভেবে এর তীরে আছড়ে পড়লেন:
কোথা বৃন্দাবন কোথা নিকুঞ্জ কুটির।
কোথা ব্রজাঙ্গনাগণ প্রিয় রাধা মোর॥
ব্রজধাম রাসস্থলী স্মরিয়া কাতর।
বাক্য নাহি স্মরে প্রভু ভাবে ঝর ঝর॥
শ্রীগৌরাঙ্গকৃষ্ণচন্দ্র লীলামৃত রসে।
শ্রীগোবিন্দচন্দ্র নৃপ কবে জানি ভাসে॥