সর্বলোকে সদা যারে করে অনুরাগ॥
তান পুত্র রাজা শূরদর্প মহাশয়।
চন্দ্রপ্রভা নামে দেবী তান মাতা হয়॥
কবি বাচস্পতি তান বাক্য অনুসারে।
শ্রীনারদীরসামৃত রচিলা পয়ারে॥
—ছোটবেলায় গ্রামে এই পুথি পাঠ শুনে আমরা বড় হইয়াছি।
নন্দলাল মহাজনের কথা শুনে দুজনেই নির্বাক। ইতিহাসের একটি অজানা অধ্যায় চোখের সামনে উন্মোচিত হতে চলেছে। যথাযোগ্য সম্ভাষণ সমাপনান্তে মহাজনবাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে করতে বিপিনচন্দ্রের মনে পড়ে গেল শৈশবে তিনিও এদিকে এসেছিলেন রাসযাত্রায়। মণিপুরি নাটমন্দিরে কাছারি-মণিপুরি মিলে করেছিলেন ওই রাসলীলা।
—আহা! কী সুন্দর ঝলমলে পোশাক! ময়ূর পুচ্ছের শিরস্ত্রাণ পরে রাধা-কৃষ্ণ। আর সেই সুললিত কীর্তনের সঙ্গে কী অপূর্ব খোল বাদন!
বিদ্যাবিনোদ বুঝতে পারছেন রায়বাহাদুর ফিরে গেছেন শৈশবের দিনগুলিতে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। দূরে নীল বড়াইল। এ পর্বত শ্রেণির ভিতর ছত্রিশটি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়েই বিদ্যাবিনোদ এসেছেন এই ভূমিতে। মাত্র দশ বছরে সাহেবরা কী অভাবনীয় কাজই না করেছেন! নইলে এত সহজে তাঁর আজ এখানে আসা অকল্পনীয় হত।
এদিকে পত্তন হয়েছে চা বাগিচা। উঁচু ভূমিতে মাত্র কয়েক বছরের চেষ্টায় সাহেবেরা তৈরি করেছেন সুদৃশ্য এক জলাশয়, স্থানীয়রা বলেন তালাব। এরই মাঝে থরে থরে ফুটে আছে শ্বেতপদ্ম। পাড়ে ঢেউ খেলানো টিলার উপর সমান করে ছাঁটা চায়ের গাছ যেন ক্লান্ত পথিকের জন্য সুখশয্যা রচনা করে রেখেছে।