এ সুন্দর পরিবেশে বিদ্যাবিনোদের মনেও রং লেগেছে। তাঁর চোখের সামনে ভেসে এল রামায়ণের সেই দৃশ্য—সীতাহারা রাম অনুজ লক্ষ্মণের হাত ধরে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করতে করতে এসে উপনীত হয়েছেন পম্পা সরোবরের তীরে। পম্পার নিটোল কালো জলে ফুটে আছে অজস্র পদ্ম। দুইভাই এ অপরূপ শোভা দেখে মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। বিস্মিত হয়ে গেলেন সীতাহরণের ঘটনা। এত বিরাট আঘাত, ক্ষণিক পূর্বে যা ছিল অসহনীয়। পদ্মকুমুদশোভিত মৎস্যসমাকুল পম্পা সরোবরের তীরে দাঁড়িয়ে রাম অনুজকে বলছেন, ‘এই জল বৈদূর্যমণির ন্যায় নির্মল, এর তীরবর্তী কানন অতি সুদৃশ্য।’ বিদ্যাবিনোদের মুখে উচ্চারিত হল আদিকবি বাল্মীকি রচিত শ্লোক। ভর দুপুরের নীরবতায় শব্দগুলো হাওয়ার সঙ্গে ভেসে গেল জলের ঢেউয়ে:
পশ্য রূপানি সৌমিত্রে বনানাং পুষ্পশালিনাম।
সৃজাতাং পুষ্পবর্ষাণি বর্ষাণি বর্ষং তোয়মুচামিব॥
এবার তো ফিরতে হবে। ভট্টাচার্য মহাশয় যে ক্লান্ত। বাড়ির বাইরে কোথাও এক বিন্দু জলও গলায় ঢালবেন না। ছত্রবাহকের কাঁধে একপাত্র জল এবং কৌটো ভর্তি বাতাসা রয়েছে যদি তিনি গ্রহণ করেন।
জলাশয়ের দিকে পিছন ফিরতেই দেখেন সামনে ঘোড়া থেকে নামছেন টুপি পরা এক গোরা সাহেব।
—নমস্কার বাবু, গুড মর্নিং টু বোথ অব ইউ। আপনাকে আমি চিনিতে পারছি জমিন্দার বাবু, মিস্টার...।
রায়বাহাদুর বলে দিলেন,
—বিপিনচন্দ্র।
—ও ইয়েস, বিপিনচন্দর। কিন্তু দিস জেণ্টলম্যান এপিয়ার্স টু বি আ স্ট্রেঞ্জার। হাও ডু ইউ ডু স্যার? বান্দাকা নাম হ্যানরি মিলস।
পণ্ডিতমশাই একেবারে সাহেবি কেতায় সম্ভাষণ করে বললেন,