করলেও চলে। সরকার বাহাদুরের কাছে নালিশ গেলেও কাজের কাজ কিছুই হল না। জবরদখল জমিতেই গড়ে উঠল সুপারিনটেণ্ডেণ্টের কার্যালয়। ছোট বড় মাঝারি জমিদার মিরাশদারেরা ছুটলেন নিজস্ব নথিপত্র দাখিল করতে। রাজতন্ত্রের অবসানে এল কোম্পানির শাসন।
বিপিনচন্দ্রের পূর্বসূরি কমলচরণ ছিলেন হেড়ম্বরাজার সর্বশেষ মন্ত্রী। রাজসভার ভাণ্ডারি, বড়ভাণ্ডারি, মোক্তার, খেল মোক্তার এদের জমি বাড়ি সম্পত্তির স্বীকৃতিও মিলল ফিশার সাহেবের আদালতে। দেবোত্তর ব্রহ্মোত্তর ধর্মোত্তর সম্পত্তি এবং প্রাচীন খেলপ্রথাকে মান্যতা দিয়েই কোম্পানির রাজস্ব নির্ধারিত হল। হাল, কুলবা, কেদার, নল ইত্যাদি পরিমাণ বাচক শব্দগুলোকে মান্যতা দিয়ে পাট্টা, নকশা, চিঠা, জমাবন্দি তৈরির কাজ শুরু হল। হাইলাকান্দি থেকে কালাইন লক্ষীপুর জয়পুর রাজাবাজার সোনাপুর বনরাজ বড়যাত্রাপুর বামঅঞ্চল, আর ছোটযাত্রাপুর থেকে লুশাই পাহাড়ের প্রান্তবর্তী অঞ্চল, দামছড়া বড়খলা থেকে কাটিগড়া বুন্দাশিল বদরপুর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে, হাতি চড়ে ঘোড়া চড়ে নৌকা চড়ে সাহেবদের বিচরণ শুরু হল। এমন সবুজ প্রান্তর, বিশাল হাওর, টলটল জলভর্তি বিল, গভীর অরণ্য এদের উন্মনা করে দিল। ঢাকা-সিলেট থেকে এলেন ফিতা হাতে দেশি পাটোয়ারি, নেটিভ নকশানবিশ, ইংলিশ রাইটার আর ইংরেজ সার্ভেয়ার। হেড়ম্ব যুগের খেল প্রথাকে অক্ষুণ্ণ রেখেই শুরু হল জমির পুনর্বিন্যাস। সে এক মহা ধুমধাম। রাজার মৃত্যুর পর পালিয়ে যাওয়া মানুষজন আবার ফিরে এল। এদের উপস্থিতিতে ম্রিয়মান ভুমিতে সঞ্চার হল নতুন প্রাণ।
সন্ধ্যার পর জমিদারের ফরশো ঘরে-এ নিয়ে জমে উঠল পুরনো দিনের গল্প। সম্মানিত অতিথি সিলেটের ইতিহাস নিয়ে যেসব তথ্য নাড়াচাড়া করেছেন এসব কথাও বললেন। এ অঞ্চলে শত শত ব্রাহ্মণের অস্তিত্বের উৎস নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেও তিনি কোন কূল কিনারা পাচ্ছেন না।