কী সূত্রে এরা উত্তর ভারত, এমনকী দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত থেকে এই ভূমিতে এসে বসতি করেন?
রায়বাহাদুর মশাইয়ের মুখে এ অঞ্চলে কোম্পানি অধিগ্রহণ, ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার কথা শুনে বুঝলেন ইনি নিতান্ত এক জমিদার নন, বিদ্যোৎসাহী বনেদি ভূস্বামীও বটে। বিদ্যাবিনোদ শুনেছেন ইতিপূর্বে আরও দুইজন ব্যক্তি নাকি কাছাড় নিয়ে অনুসন্ধান করতে এদিকে এসেছিলেন। একজন মৈনা গ্রাম নিবাসী অচ্যুতচরণ চৌধুরী, অপরজন কাছাড় জেলার শিক্ষা আধিকারিক, এস আই, উপেন্দ্রচন্দ্র গুহ।
নৈষ্ঠিক ব্রাহ্মণ মহামহোপাধ্যায় গভীর শ্রদ্ধা সহকারে বলে চলছেন সিলেটের পির শাহজালালের কথা। কী করে ছয় শতাব্দী পূর্বে ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে সুদূর ইয়েমেন থেকে এ অলৌকিক পুরুষ এই ভূমিতে পদার্পণ করলেন, রাজা গৌড়গোবিন্দকে যুদ্ধে পরাজিত করে অধিকার করলেন শ্রীভূমি-সিলেট রাজ্য। নিজ দেশ থেকে নাকি এনেছিলেন একজোড়া কবুতর আর এক পুঁটুলি মাটি। কবুতর জোড়া সিলেটের আকাশে স্বচ্ছন্দে উড়তে শুরু করল, পুঁটুলির মাটি মিশে গেল সিলেটের মাটিতে। পির এ মাটিকেই আপন করে নিলেন। তাঁর অলৌকিক শক্তির কাছে বনের পশু, নদীর খরস্রোত, দুর্গম পাহাড় হার মানল। তাঁর স্পর্শে সুরমা নদীর জল হল সুপেয়। এক আশ্চর্য মৃগচর্মে বসে তিনি সুরমা নদী এপার ওপার করতে লাগলেন। অরণ্যের ব্যাঘ্রসমূহ তাঁর কাছে মাথা নত করল। তাঁর শিষ্যত্ব বরণ করলেন ব্রাহ্মণ শূদ্র বৌদ্ধ নির্বিশেষে। কী করে সহজিয়া সাধনতত্ত্বের এ প্রান্তিক ভূমিতে সুফি ইসলামতত্ত্ব এসে মানুষের মনকে জয় করে নিল এ সবই মহামহোপাধ্যায়ের চর্চার বিষয়। তিনি ৩৬০ জন আউলিয়ার নামের একটি তালিকা তৈরির কাজও শেষ করে আনছেন জানালেন। তাঁর বিশ্বাস কাছাড়ের কাটিগড়া, কালাইন কিংবা বদরপুর অঞ্চলের দিকেও এদের কয়েকজনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বায়বাহাদুর