জানালেন তাঁর অনুমান সঠিক। নইলে সুরমা পেরিয়ে এতদূরে এদিকে একটি গ্রামের নামই বা কী করে হয় ‘জালালপুর’। আঁতকে উঠলেন বিদ্যাবিনোদ,
—কী বললেন? জালালপুর? বেশ নাম তো। ইসলামীয় নামবাচক শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘পুর’। বাঃ বাঃ, বেশ তথ্য দিলেন মশাই।
উৎসাহ পেয়ে রায়বাহাদুর বললেন আমাদের অঞ্চলে পুর দিয়ে কত স্থাননাম আছে গুণে শেষ করা যাবে না, যেমন রামপুর, বিজয়পুর, লক্ষীপুর, কনকপুর, রতনপুর, নাতানপুর, যাত্রাপুর, সোনাপুর, বিক্রমপুর, বাহাদুরপুর, আকবরপুর, বদরপুর। বিদ্যাবিনোদ জানালেন দ্রাবিড় উৎসজাত এ ‘পুর’ শব্দটির উল্লেখ আছে ঋক্ বেদে। রায়বাহাদুর বলে ওঠেন,
—আচ্ছা, এর সঙ্গে যখন ইংরেজি শব্দ জুড়ে বসে তখন আপনি কী বলবেন, যেমন স্কটপুর, জেকবপুর, আলেকজাণ্ডারপুর?
—কোথায়? কাছাড়ে? এরকম স্থাননামও আছে নাকি এ দিকে? সত্যিই আমাদের এই দেশের এই রকম প্রান্তভূমিতে এসে কত কি শিখছি!
তিনি আবার ফিরে গেলেন জালালপুর প্রসঙ্গে। রায়বাহাদুর জানালেন এ গ্রামে তাঁর আত্মীয়তাও আছে।
বিপিনচন্দ্র আশ্চর্য হয়ে গেলেন এ কঠোর ব্রাহ্মণের মুখে সুফিতত্ত্বের কথা শুনে। এই সেই ব্যক্তি যে কিনা উদারনৈতিক বিশ্ববিজয়ী সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দের বিরুদ্ধাচরণ করতেও দ্বিধা করেননি। কামাখ্যা দর্শন করতে আসা স্বামীজির সঙ্গে তিনি যে বিরাট তর্কযুদ্ধে নেমে গিয়েছিলেন এ কথা রায়বাহাদুরের কানেও এসেছে। তিনি প্রসঙ্গটি উত্থাপন করা মাত্রই বিদ্যাবিনোদ কথঞ্চিৎ উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,
—আপনারা আসমুদ্র হিমাচলবাসী যাঁকে মাথায় তুলে উদ্বাহু নৃত্য করছেন, আমি তাঁকে একজন রাজনৈতিক বক্তা, কিংবা বহুভাষিক এক পণ্ডিত ছাড়া আর কিছুই মনে করি না। তিনি এখন স্বর্গত, তাঁর সম্বন্ধে কিছু বলা অসঙ্গত।