পাণ্ডিত্য, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি সত্বেও সন্ন্যাসীর সাজ পরা লোকটি আমার মনে হয়েছে যেন মেষচর্মাচ্ছাদিত একটি কেশরী।
এ কথাগুলো আমি লিখিত ভাবেই প্রচার করেছিলাম।
৭
অতিথির সঙ্গে আলাপচারিতায় পারিবারিক প্রসঙ্গ উঠলে রায়বাহাদুর তাঁর স্বগোষ্ঠীয় খুড়ামশাই পুবের বাড়ির জগমোহনবাবুর কথা বললেন। তাঁর সংরক্ষণে রাখা একটি বৃহদায়তন ‘পদ্মাপুরাণের’ কথা উঠলে অন্য সব প্রসঙ্গ চাপা পড়ে গেল। বিদ্যাবিনোদ পারলে এক্ষুনি ছুটে যান পুথিখানা দেখতে। আনা হল সাদা কাপড়ে মোড়া লাল রশি দিয়ে বাঁধা একহাত প্রশস্ত গ্রন্থটি। যেন সাতরাজার ধন হাতে এল। পদ্মনাথবাবু উলটে পালটে দেখলেন হস্তলিখিত পুথিটি। একাধিক হাতের লেখা। গ্রন্থ শেষে সই আছে জগমোহন দে। আরও একটি নাম জীবনকৃষ্ণ। বিপিনবাবু বললেন ইনি আমার আরেক খুল্লতাত। নিখুঁত হাতে দেশজ উপাদানে তুলোট কাগজের উপর লেখা রয়েল সাইজের এ গ্রন্থ। সমাপন তারিখও আছে ১২৮৫ বাংলা। রায়বাহাদুর মুখে মুখে হিসাব কষে বললেন ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দ। পদ্মনাথবাবু হেসে বলে উঠলেন,
—আপনারা ‘বঙ্গাব্দ’কে দেশছাড়া করবেন নাকি? আপনার আমার জন্মের পূর্বে যে সাহেবি তারিখের প্রচলনই হয়নি। এ গ্রন্থ আমার জন্মের দশ বছর পরের।
এই বলে মাথায় দুই হাত ঠেকালেন।
গোটা শ্রাবণ মাস জুড়ে এ গ্রন্থপাঠ ও সঙ্গে পাখোয়াজ কর্তাল সহযোগে ভাসান গান চলে ওবাড়িতে।
—আগে তো আমি নিয়মিত শুনতে গেছি। আমার স্ত্রী কন্যারা তো যাবেই। এ গানের রসই আলাদা। কবি নারায়ণ দেব, দ্বিজ বংশীদাস,