ষষ্ঠীবরের লাচাড়ি, দিশা তো আছেই, তাছাড়া রয়েছে স্থানীয় ওঝাদের মুখে মুখে রচিত পদ, এমনকি খুড়া জ্যেঠাদের নিজস্ব পদ।
রায়বাহাদুর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলতে শুরু করলেন,
—এ গানে শুধু বিষহরির পদ না তো—কীর্তন, ভাটিয়ালি মালসি, ঝুলন আর হোলি গানের সুরও মিশে থাকে। তবে আমি এসবের খুব কমই বুঝি।
বিদ্যাবিনোদের ইচ্ছা রায়বাহাদুর কালই এ গান শোনার একটা বন্দোবস্ত করে ফেলেন। তিনি জানেন বাঙালির সংগীতের সহস্রধারা এসে মিশে যায় পদ্মাপুরাণ বা ভাসান গানের আসরে। দেশের বাড়িতে কত না শ্রাবণ দিন কাটিয়েছেন এমনি ভাসানের গান শুনে।
—আমার ভগ্নী ব্রহ্মময়ীর গান আপনাকে শোনাতে পারলাম না। হতভাগিনীকে খুড়ামহাশয় কাশীধামে নিয়ে গৌরীদান করেছিলেন। আপনাদের সিলেট ঢাকাদক্ষিণের বিখ্যাত রাহা পরিবারে। জামাই নবীন রাহা বিবাহের অব্যবহিত পরই দেহরক্ষা করেন। নিজে জানতেই পারল না আইন পরীক্ষায় তাঁর সাফল্যের কথা। অন্যসময় হলে অতিথি এলে এ ভগ্নী দু’একখানা গীত না শুনিয়ে ছাড়তই না। এই ভরা ফাল্গুনে দু’কলি পদ্মাপুরাণ গাওয়া তাঁর কাছে কোন ব্যাপারই হত না। কিছুদিন আগে তাঁর গলায় ‘ক্ষুদিরামের ফাঁসি’ শুনে মানুষ অঝোর ধারে কেঁদেছে—‘ভুলিবে কি প্রাণান্তে, ও ভারতবাসী, বড়ো অবিচারে হইলরে আমার ক্ষুদিরামের ফাঁসি’।
পদ্মনাথবাবুর পীড়াপীড়িতে ডেকে আনা হল দশবছরের বালক যতিকে। দিদির কাছে শেখা গানটি বড়ো আকুল কণ্ঠে গাইল। গানের ভণিতার পদটি শুনে পদ্মনাথ চোখের জলে ভাসলেন—
কেঁদে বিপিন পালে বলে
বুক ভেসে যায় নয়ন জলে
দেশের কথা ভাবলে