—আমার বন্ধুবর তারাকিশোরের কথাই বলছি। কলিকাতায় আমরা একই মেসবাড়িতে থাকতাম। তাঁর সততা এবং মেধার পরিমাপ করাও দুঃসাধ্য। তিনি যখন মামলাটা হাতে নিয়েছেন, আপনি নিশ্চিত থাকুন। আপাতত আপনাকে বলে রাখি, আপনার প্রতিপক্ষের ঘটে এত বুদ্ধি নেই যে উচ্চ আদালতে তৈরি-করা একটি কাহিনিকে ইতিহাস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। এ যাবৎ যে কাহিনিটি আপনি আমাকে শোনালেন এটাই সাদামাটা ভাষায় লিখে পাঠিয়ে দিন। যতটুকু পেয়েছেন, ঠিক ততটুকুই। যা পাননি, তা নিয়ে চিন্তা করলে যা পেয়েছেন তাও হারাবেন। সন্ধানকারীকে কেউই সিন্দুক খুলে তথ্যপাতির যোগান দেয় না। আর বলে রাখি, সত্যের সূত্র সিন্দুক বা ফাইলপত্রে লুকিয়ে থাকতে পারে না, তার থাকে অজস্র ফাঁক-ফোকর। আর হ্যাঁ, বিদ্যাবিনোদের এই যে বই ‘হেড়ম্ব রাজ্যের...’ কী যেন নাম, এর দুই কপি জমা দেবেন। পারবেন তো?
— আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি এ বইয়ের প্রকাশকও বটে।
—তা হলে পারিশ্রমিক হিসেবে একটি বই আমি পেতেই পারি? শুনেছি বানিয়াচঙের মহামহোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব।
—না, না, ঠিক তা নয়। ইনি অনেক উঁচু স্তরের মানুষ। আমি তাঁর বন্ধুত্বের দাবিদার হতে পারি না, তাঁর গুণমুগ্ধ সহযোগী মাত্র।
—এ আপনার বিনয়। কাছাড়ের জমিদারদের এটা একটা মহৎ গুণ। এদের লাঠিয়ালবাহিনী নেই, আছে বিনয়।
বিপিনবাবুর মুখে মুচকি হাসি। তার সদ্যোজাত পুত্রের নাম যে বিনয় এ কথাটা মুখে এলেও বলতে পারলেন না ।
এত ব্যস্ত আইনজীবীর আজ যেন কোনও তাড়া নেই। ভিতর বাড়িতে চা মিষ্টির আয়োজন হয়েছে। বিপিনবাবুর মনটাকে হালকা করার জন্য তিনি পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদের খ্যাপামো নিয়ে কিছু প্রসঙ্গের অবতরণা করে বসলেন। ইনি নাকি স্বামী বিবেকানন্দকে দু’চোখে দেখতে পারেন না?