পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা
৪৩

সব মিলিয়ে কিছু ইংরেজি কিছু বাংলায় একটা খসড়া খাড়া করলেন। দেড়শো বছর পূর্বেকার স্বপ্নদর্শন উপাখ্যান, দেবীর আবির্ভাব, হেড়ম্ব রাজসভার খাসপুরে স্থানান্তর, বংশের আদিপুরুষ চান্দ লস্করের পুত্রের মন্ত্রিত্ব লাভ, এসব তো এক মহাভারত। সদর থেকে চড়ামূল্যে কিনে আনা এক দিস্তে বালি কাগজ বুঝি শেষই হয়ে যাবে।

 মন্ত্রিত্ব লাভের পর মণিরামের দুশ্চিন্তা—খাসপুর রাজসভা কি শেষ পর্যন্ত মাইবঙের সঙ্গে সংযুক্তি মেনে নেবে? চারিদিকে তো উস্কানিদাতার অভাব নেই। মণিপুর, ত্রিপুরার সেনাদের বিচরণ তো রয়েছে। রাজ্যে কুকি, লুশাই, পেইতা নাগার আক্রমণ জনজীবনে ত্রাস সৃষ্টি করেই চলেছে। ওদিকে কোচ দেহান রাজবংশীরা পাহাড় ডিঙিয়ে কোচ রাজ্যে ফিরে যাবার আশা ত্যাগ করেছে। এখন কাছাড়ই তাঁদের নিজভূমি। এরা অবশ্য শান্তশিষ্ট, ক্ষেত-কৃষি, বনের মধুসংগ্রহ, শিকার নিয়ে আছে। কিন্তু অস্ত্র হাতে নিতে কতক্ষণ? বীর চিলারায়ের বীরত্বগাথা, সেনাপতি কমলনারায়ণ ওদের স্মৃতিতে জাগ্রত আছেন। এরা মনে রেখেছে কোচরাজা উদিতনারায়ণ, বিজয়নারায়ণ, ধীরনারায়ণ, মহেন্দ্র, রজত আর নরসিংহকে। কাছাড়ের মানুষ দেহান বিদ্রোহে নিহত এক কোচরাজার কথাও স্মরণে রেখেছেন, যাঁর পরই সিংহাসনে আসেন উদিতনারায়ণ। মণিরাম উজির চিন্তিত-অপুত্রক রাজা ভীমসিংহের কন্যা কাঞ্চনীর সঙ্গে যুবরাজ লক্ষ্মীচন্দ্রের বিবাহকে কি রাজবংশীরা মেনে নেবে? কাছাড়ের ব্রাহ্মণ কায়স্থ এবং মুসলমান জমিদার, মিরাশদাররাই বা দুই রাজ্যের সংযুক্তিতে মনেপ্রাণে সায় দেবেন?

 প্রশ্নগুলো যে ভাবে মনে আসছে তিনি লিখে যাচ্ছেন। বেলা দ্বিপ্রহর গড়িয়ে যায়, ভিতর বাড়ি থেকে বার বার ডাক আসছে। এবার উঠতেই হবে। তবে সন্ধ্যা হওয়ার আগে আরও এগিয়ে না গেলে যে রাতের ঘুম নষ্ট হবে। গ্রামে কেরোসিনের বাতি এলেও বার্মা ওয়েল কোম্পানির লাল