পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা

কেরোসিনে যতটা ধুঁয়া হয় আলো ততটা হয় না। আর কুপিলম্পের শিস সারা ঘরকে করে তোলে বিষাক্ত। বিপিনবাবু গিন্নিকে সন্ধ্যার জন্য রেড়ির তেলের প্রদীপ তৈরি করে রাখতে বলে স্নানে গেলেন।

 একবার উঠে গেলে খেই হারিয়ে যায়। ইতিমধ্যে মাথার মধ্যে আরও অনেক প্রসঙ্গ এসেছে ভিড় করে। মনে হচ্ছে আরও একটু পিছনে যাওয়া প্রয়োজন। তারাকিশোরবাবু কতটা গ্রহণ আর কতটা বর্জন করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। একবার কামিনীবাবুর সঙ্গে দেখা করলে হয়, কিন্তু তিনি নাকি ‘কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে’ যাচ্ছেন। ওদিকে রেলের কৌসুলি হয়েও তাঁকে এদিক ওদিক বিচরণ করতে হচ্ছে। আর কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্বও তাঁর উপর। কোন আক্কেলে আবার তাঁর ওখানে যাই ব্যক্তিগত কাজে? এসব ভেবেচিন্তে নিজেই আবার শুরু করলেন একটু পিছন থেকেই। সেই আহোম আক্রমণের সময় থেকেই। শুনেছিলেন ষোলশো আটাশ শকাব্দে আহোম সেনা মাইবঙ রাজধানী অধিগ্রহণ করলে মহারাজ তাম্রধ্বজ নারায়ণ আশ্রয় গ্রহণ করেন সমতল কাছাড়ে। সঙ্গে মহারানি চন্দ্রপ্রভা। কী ক’রে গড়ের ভিতর গ্রামে খড়ের ছাউনির নীচে তৃণশয্যায় অস্থায়ী রাজপাটে শুরু করলেন অনিশ্চিত যাত্রা এ প্রসঙ্গেরও অবতারণা করলেন। চান্দ লস্কর মাঝে মাঝে যেতেন মহারাজ সান্নিধ্যে। রাজ্যহারা মহারাজের খুব পছন্দের মানুষ এ ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তিটি। মহারানির আবার ছিল সংগীত কাব্য সাহিত্যে রুচি, ঈশ্বরে গভীর আস্থা। এই দুর্দিনেও ঘাস মাটি খড়কুটোর রাজসভায় এসে জুটলেন এক কবি। হৈড়ম্ব বংশীয় এ কবি শ্রীহট্টে ন্যায়শাস্ত্র, বৈষ্ণব-দর্শন পাঠ করে সে সঙ্গে বাংলায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করে কী করে এই কাছাড় ভূমিতে এসে পৌঁছালেন কে জানে। চান্দলস্করের সঙ্গে তার সখ্য হতেও সময় লাগল না। দুজনের নামের মধ্যেও রয়েছে মিল। একজন চান্দলস্কর, অপরজন চন্দ্রমোহন। প্রাচীন দিনের কথা তিনি ছন্দবদ্ধ বাক্যে গেঁথে শোনান। রাজ্যহারা দুটি প্রাণী তাই শুনে যান। দুর্বল মুহূর্তে