খাঁটি স্বদেশি এটা বুঝিয়ে জ্যেষ্ঠতাতকে আশ্বস্ত করে রাগ প্রশমন করলেন। বোঝালেন সাহেবি পোশাক না ধরলে সাহেব সার্টিফিকেট দিতে দেরি করবে।
বিপিনচন্দ্র নিজে অবশ্য ইংরেজ পাদ্রিদের স্কুল এবং সিলেটের ইশকুল থেকে দুটো ভাষাই ভালো করে রপ্ত করে ফেলেছেন ইতিপূর্বেই।
ওদিকে মণিরামের আট সন্তানের পরবর্তীদের আলাদা আলাদা বসতবাটি এবং তাঁদের প্রজাদের নিয়ে গ্রামটি জমজমাট। খরস্রোতা জাটিঙ্গা এখানে এসে ধারণ করল শান্ত সৌম্য রূপ। দুই তীরে কাশবনের উচ্ছ্বাস, ভিতরে গেলে সবুজ ধানের ক্ষেত, কলাবাগান, আম জাম কাঁঠাল আর বিশাল বৃক্ষসমূহ। বহুদিন হল বর্মা-মণিপুর সীমান্ত পেরিয়ে যুথবদ্ধ হাতির পাল নেমে আসে না। গ্রামপত্তনের সঙ্গে সঙ্গে এরাও গতিপথ বদল করে ফেলেছে। জৈন্তাপুরি পাঞ্জালি, মাহুত, খেদা সর্দারদেরও কোনও কাজ নেই। পশ্চিমপ্রান্তে বৃহদায়তন হাতির খোলাও প্রায় বন্ধ। এ অঞ্চলের খোলাই একটা সময় ছিল সবচেয়ে বড় খোলা। এক সময় এখান থেকে হাতি চালান যেত শ্রীহট্ট, আসাম, মুর্শিদাবাদ হয়ে মোগল রাজদরবারেও। টমাস ফিশারও এই খোলায় ধৃত হাতি খরিদ করেছিলেন। ডিমাপুরি, জৈন্তাপুরি ধাইদার এখন ‘কাছাড় লেভিতে’ হাতির রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত। জিলা সদরের টিকরবস্তির পিলখানায় হাতির পরিচর্যা করে ভাগ্য ফিরিয়ে নিয়েছে রায়পুরের ভঙ্গাইর গোষ্ঠী, মাহুত পাড়ার নব্য মিরাশদাররা।
দেখতে দেখতে পুরো ‘মুলুক হেড়ম্ব’ ইংরেজ সাহেবের কুক্ষিগত হয়ে গেল। একে একে এলেন বার্নস সাহেব, পিয়ার্সন সাহেব, লায়ন্স আর জাঁদরেল সাহেব, জি ভার্নার। যেমন তাঁর দশাসই চেহারা, তেমন তাঁর সাহস। গ্রাম গ্রামান্তরে যখন তখন উড়ল ঘোড়ার ক্ষুরের ধুলি। এখন আর পাহাড়িদের আক্রমণ নেই, ‘ভাগানে’র দৌড়ও নেই। প্রাচীন দিনে এ ছিল এক একটা দুঃস্বপ্নের অধ্যায়। পাহাড় থেকে অস্ত্র হাতে নেমে