পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা

আসত মানুষ। বাড়ি ঘর গ্রামবস্তি উজাড় হয়ে যেত। ভাগান ছিল অনেক ধরনের—মাড়ির ভাগান, পিরের ভাগান আরও কত কি। এসব ক্ষেত্রে মানুষের সামনে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

 সাহেবদের উৎসাহে এখন আগুন জ্বেলে বন পরিষ্কার করে লাঙল চালানোও শুরু হল। ওঁরা বলেন বনফায়ার (bonfire), দেশীয়রা বলে ‘বনফারা’। নদী পারাপার করতে সাহেবরা বলেন বার্ক, মাঝিরাও বলা মতিনগর, ভুবন, শুরু করল ‘বারকি নৌকা’। তো সোনাই, বাম অঞ্চল, বিন্নাকান্দির বনে বনে চলল বনফারা। মানে এক ধরনের খাণ্ডবদহন পর্বই। এটা সম্প্রসারিত হল কাটিগড়া, বদরপুর, হাইলাকান্দিতেও। আগুনের লেলিহান শিখায় শতাব্দী প্রাচীন আগর, অর্জুন, অশোক, আম, জাম, অশ্বত্থ, কদম্ব, গাব, গামারি, কাঞ্চন, ঘোড়ানিম, চাম, চালতা, নাগেশ্বর, বহেড়া, রামডালা, রাতা, শিমুল, জারুল, মক্কাতেঁতই, কালা উঝা, ধলা উঝা, গর্জন, শিরীষ আর হরতকির বন পুড়ে ছারখার হল। জঙ্গলের জাই, বরুয়া, বাকাল, বেতু, মুলি, ডলু, পেচা, মির্তিঙ্গা বাঁশ ফেটে বন্দুকের গুলির মতো আওয়াজ খান্ খান্ করে দিল হাজার বছরের নীরবতা। বিপন্ন হয়ে ছুটতে লাগল রামছাগল, বুনোমহিশ, গণ্ডার, হাতি, বাঘ আর ভালুকের দল। কাতারে কাতারে মারা গেল খুপিয়া বাঘ, শিঙ্গাল, খাটালি, আমড়া খাউরি, শিয়াল আর ফেউয়ালি। প্রাণ বাঁচাতে লোকালয়ে ঢুকে প্রাণ হারাল নানান প্রজাতির হরিণ আর শূকরের দল। মানুষের খাবারের পাতে এল ধনেশ, বনমুরগ, বনরুই, সজারু, আর ময়ূর। যে রামকুকুরের দল আগে অরণ্যচারীদের চোখে থুতু ছিটিয়ে অন্ধ করে দিত এরা হল দিশেহারা। অজগর, আলদ, ডাঁড়াস, দু’মুখা পাটোয়া, কালাজ, চন্দ্রবোড়া, সঙ্গে মনিটর লিজার্ড, এদিকে বলে তিলকৈ এরা এসে আশ্রয় নিল গৃহস্থ বাড়ির আনাচে কানাচে।

 স্থানীয় জনগণের মনের ভয় দূর করতে ইতিমধ্যেই ফিশার সাহেব পুরো মুলুকের এখানে ওখানে জমি বন্দোবস্ত দিয়ে বসালেন মণিপুরি