পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা
৪৯

সেপাইদের। এদের হাতে মামুলি কিছু অস্ত্রশস্ত্র আর মনে অসীম বল। তবে পিছনে ইংরেজ হুজুরের অভয় থাকলে আর কীসের ভয়? দেখতে দেখতে কোম্পানির রাজকোষ পূর্ণ হয়ে উঠল। পাহাড় থেকে আনা হল সঙ্গিল মহিষ, জৈন্তাপুরি মিস্ত্রিরা বানিয়ে দিলেন চাষের লাঙল; ঢাকা, ছাতক থেকে আসা কামার বানিয়ে দিলেন লাঙলের ফাল, দাও, কুড়াল, আর গরুমহিষের রোগের দাওয়াই দিতে এলেন পশ্চিমী হেকিমের দল; এদের উপর ভর করা ভূত প্রেত, দেও তাড়াতে লামার দেশ আর আসাম থেকে এলেন মোল্লা আর ওঝার দল।

 সাহেবরা হেড়ম্ব আমলের মোক্তারি প্রথা উঠিয়ে আনলেন তহশিলদারি প্রথা। রাজার আমলের ভাণ্ডারি, খেলমা মজুমদার, রাজমোক্তারদের মাথায় পড়ল বাজ। নতুন যুগের পেয়াদা, মিরাশদার এবং ক্ষমতাচ্যুত মোক্তারদের যোগসাজসে আবার রাজকোষে ঘাটতি পড়তে শুরু হলে সাহেবদেরও টনক নড়ল। নড়েচড়ে বসলেন ঢাকা ডিভিশনের কমিশনার গর্ডন সাহেব। এবার সংস্থান হল বেতনভূক তহশিলদারের। তিনটি তহশিলে খাজনা আদায়ের জন্য তলবনামা, বাকিজায় প্রস্তুত হল, খাজনা আনাদায়ে মহাল কুরুক করে মিরাশ নিলামে বিক্রী করার ব্যবস্থাও হল। নব্য প্রশাসকদের তৎপরতায় ঘাট-শুল্ক, লবণ মহালের কর, মৎস্য, বন, ফেরিঘাট এবং গাঞ্জা, আফিম, মোদক প্রভৃতি আবগারি দ্রব্যের কর বাবদ মোটা অর্থ কোম্পানির ভাণ্ডারে জমা পড়ল। এদিকে আদালতের স্ট্যাম্প, গরুমহিষের বিকিকিনি, খেদা মারফত অর্থ তো আসছেই। মানুষের মাথায় বজ্রপাত হল যখন বাজারে বাজারে ঢোল পিটিয়ে জানানো হল যে ‘কোম্পানি বাহাদুরের আদেশ মোতাবেক ঘরের উপর কর ধার্য করা যাইতেছে’। জল্পনা কল্পনা শুরু হল, কী জানি রৈদের আলো আর গাঙের পানির উপরই ট্যাকসো পড়ে কি না। সেয়ানারা বুঝল রাজার আমল শেষ, এখন সমস্ত কিছুই পাবেন, তবে নগদ কড়ির বিনিময়ে।