পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা
৫৭

 রায়বাহাদুরের হাতে ইতিপূর্বে গ্রন্থখানি পৌঁছে গেছে, কিন্তু খুলে দেখা আর হয়ে ওঠেনি। তবে স্বয়ং ঐতিহাসিকের মুখে এর বর্ণনা তাঁকে রীতিমতো রোমাঞ্চিত করে তুলল। কী করে মণিপুর রাজ মধুচন্দ্রের কন্যা ইন্দুপ্রভার অনুরোধে শৈবতীর্থ সন্ধানকল্পে যাত্রা করে সচিব জয়সিংহ বার্মা স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে উপস্থিত হলেন সোনাপুরের চন্দ্রগিরিতে এবং মন্দির নির্মাণ প্রতিষ্ঠা করলেন ভুবনেশ্বর শিব মহাদেবকে।

 —মন্দিরটি এখন সংস্কারের অভাবে জীর্ণ, কিন্তু দু’খানা প্রস্তরলিপি আজও অক্ষত রয়েছে। আমি স্বয়ং পায়ে হেঁটে মন্দির দর্শন করতে গেছি এবং দু’খানা লিপির বয়ান নকল করেও এনেছি। আপনি ‘ইতিবৃত্তে’ পাবেন।

 রায়বাহাদুরের মনে পড়েছে এ ঐতিহাসিক তো তাঁর সঙ্গে দেখা করতে একবার গিয়েছিলেন। রাজা ইশকুলের কোনও একটা বিষয়ে সরকারি কাজেই ওই যাওয়া। তখনই তিনি মহারাজ কীর্তিচন্দ্রের সনন্দখানা দেখতে চেয়েছিলেন। তবে দেখা হয়ে ওঠেনি এ কথাও তিনি তাঁর বইতে উল্লেখও করেছেন। একটা বিষয়ে তাঁর মনে খটকা লাগছে। পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ এবং অচ্যুতচরণ তত্ত্বনিধি দুজনে একই বিষয়ে একই সময়ে কাজ করে গেছেন, বইও লিখেছেন, কিন্তু মনে হল এরা উপেনবাবুকে চেনেনই না।

 —আমার তো ঢাকা জেলার লোকটিকে চমৎকার লাগছে। একটু টানা সুরে কথা বলেন ধীরে ধীরে। আমাদের কাছাড়বাসীর কাছে সবই সমান।

 বিপিনচন্দ্রের মনে একটা খটকা লাগল।

 —তবে ওসব বিদ্বান, পণ্ডিতদের ব্যাপার, আমার এতে কিছু বলার নেই।

 খুব সুচতুর ভাবে পদ্মনাথ প্রসঙ্গ এড়িয়েই তিনি আলোচনা করে গেলেন। উপেনবাবু একেবারে গুরুমশাইয়ের মতো মন্দিরগাত্রে উৎকীর্ণ সংস্কৃত লিপির বয়ানটি উচ্চারণ করে জানালেন এরই মধ্যে একটা astrological puzzle আছে যার সমাধান করেই তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠার দিনক্ষণ তিথি নক্ষত্র বের করতে পেরেছেন।