গুহমশাইয়ের আজ আর কোনও তাড়া নেই। ইতিপূর্বে যে মানুষটির কাছে পেয়েছিলেন উপেক্ষা, আজ এ ব্যক্তির বিনম্র আচরণ দেখে তাঁর মনের ভিতর জমানো পুরনো অভিমান ফুৎকারে উড়ে গেল। শিক্ষকের মতোই তিনি একটুকরো কাগজ টেনে নিয়ে দুর্বোধ্য কথা ক’টি লিখে রায়বাহাদুরের সামনে তুলে ধরে বললেন,
—প্রস্তরলিপিতে উৎকীর্ণ এ কথাটির আপাতদৃষ্টিতে কোনও অর্থ হয় না-‘খেটাম্বর নগেন্দু শাকে ভানু স্থিতে মন্মথ রাশৌ পূর্ণমিতি’।
পদ্মনাথ সান্নিধ্য বিপিনবাবুকে পণ্ডিতদের ধরন ধারণ সম্বন্ধে সচেতন করে রেখেছে ইতিপূর্বেই। তিনি নিবিষ্ট মনে বোঝার চেষ্টা করছেন।
—এ শব্দগুলোকে এ ভাবে সাজানো যাক—প্রতি শব্দের corresponding একটা করে গাণিতিক সংখ্যা রয়েছে—
খেট: = ৭, এতে আছে সপ্তরথির অনুষঙ্গ
অম্বর = ০ মহাশূন্য আকাশ
নগ = ৭ সপ্ত পর্বতের অনুষঙ্গ
ইন্দু = ১ চন্দ্র তো একমোবদ্বিতীয়ম।
রায়বাহাদুরের মাথা ঝিম্ ঝিম্ করছে। তবে গুহমশাই পরিবেশ হাল্কা করে দিলেন,
—দেখুন তো কত হল? ৭০৭১। আপনাদের জমিদারির হিসাবে কী হয় জানি না, তবে এখানে আর্য্যাটি হল ‘অঙ্কস্য বামা গতি’। অবশ্য বাকিজায়ের খাতায় করলে সমূহ ক্ষতি। তবে এখানে করলে পাবেন ১৭০৭ শকাব্দ (শাকে)।
রায়বাহাদুরের তো চক্ষু চড়ক গাছ। তবে তিনিও চমক দেখালেন। কলমটি কেড়ে নিয়ে সংখ্যাটির সঙ্গে ৭৮ যোগ করে বলে উঠলেন ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দ। জমিদারির দলিল ঘাঁটতে ঘাঁটতে গিয়ে এটা তাঁকে করতে হয়।