সাহেবদের আদালতে সন তারিখগুলোকে অহরহ খ্রিস্টাব্দে রূপান্তরিত করে দিতে হয়। গুহমশাই বাকি কথাটিও শেষ করে দিলেন,
—এটাও আপনার জানা থাকতে পারে যে সূর্য আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে মন্মথ রাশিতে স্থিত হয়। এখানে বলা হয়েছে ‘ভানুস্থিতে মন্মথ রাশৌ’। ওই নির্দিষ্ট দিনটিতেই মন্দির নির্মাণকার্য ‘পূর্ণমিতি’ অর্থাৎ সম্পূর্ণ হয়েছে।
বিপিনচন্দ্রের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো ক্রমে ক্রমে বিস্তার লাভ করছে। সেই পণ্ডিত পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদ আসার পর থেকে তিনি যে দিকে যান, যেদিকে তাকান ইতিহাসের সূত্রগুলো এসে ভিড় করে। এরকম চলতে থাকলে জমিদারি চালাবেন কী করে? ওদিকে সরকার থেকে তাঁর কাছে একের পর প্রস্তাব আসছে। লোক্যাল বোর্ডের কিছু দায়িত্ব তো নিজেই আগ বাড়িয়ে নিয়ে বসে আছেন। কমিশন-ভিত্তিক মৌজাদারির দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তাবও এসেছে। বনরাজ সোনাপুর এবং লক্ষীপুর পরগনার রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা প্রশাসনিক দায়িত্বও এসেছে।
আবার এদিকে পারিবারিক দায়িত্বও বাড়ছে। বৃহৎ পরিবারটির যে দুইটি শরিক রয়েছে গ্রামে, এর মধ্যে অনেক বিভাজন। সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা, তালুক বিভাজন ছাড়াও সরকারি খাতায় নামভুক্তি, দ্বিতীয় রি-জরিফা এসব নিয়ে জটিলতা ক্রমেই বাড়ছে। মণিরাম থেকে নীচে পাঁচ পুরুষ অতিক্রান্ত বর্তমান অর্থাৎ ষষ্ঠস্তরে আসতে আসতে “পূর্বে বৈল্যা হাওর ও আভঙ্গ, পশ্চিমে তাহিরর পশ্চিম সীমানা, উত্তরে পানিঘাট আর দক্ষিণে বড় বরাক” —রাজসভা নির্ধারিত জমিদারির এই চৌহদ্দিতে বিগত দুইটি শতাব্দীতে প্রকৃতির খেয়ালে এবং মানব সৃষ্ট কারণেও বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে। বৈল্যা হাওরের সীমানাও একদিকে সংকুচিত হয়ে অপর দিকে বিস্তার লাভ করেছে। বড়-বরাকও বিশাল অজগর সাপের মতো তার গতিপথ এদিক ওদিক পালটে তীরবর্তী জমি, গ্রাম গ্রাস করেছে, কোথাও আবার সৃষ্টি