পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা

করেছে বিস্তীর্ণ চরাভূমি। গত পঞ্চাশ বছর আগেও মণিরামের মোট আট ভ্রাতার মধ্যে চার জনের স্বতন্ত্র বসতবাটির অস্তিত্ব সনাক্ত করা সম্ভব হত। কিন্তু এখন সব বিলুপ্ত হয়ে সাকুল্যে দুইটি বাড়িই বহাল রয়েছে, পবের বাড়ি আর পশ্চিমের বাড়ি, অনেকে বলে ‘ওবাড়ি’ আর ‘হবাড়ি’। নদীর ওপারে মজুমদার বাজার, বড়যাত্রাপুর, বিক্রমপুর কিংবা বিহাড়া কালাইনে যারা বসতি করেছেন পাঁচ পুরুষের দূরত্বে এদের সঙ্গে পারিবারিক সংযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। একটি পরিবার নাকি ধর্মান্তরিতও হয়েছে, দুইপুরুষ পর সামাজিক প্রথায় এদের সঙ্গে জন্মমৃত্যু বিবাহের সংবাদ আদান প্রদানও আর নেই। বিস্তৃত জমিদারি নানা ভাগে বিভক্তও হয়েছে। জেলা সদরে ভকিল, মুহুরিদের কারসাজিতে কোন্ জমি কোন্ দিকে হস্তান্তরিত হয়েছে, কোন্ পাট্টা কার যোগসাজসে কোন্ দাগ নম্বরে সামিল হয়েছে, উকিল মোক্তার আর পেয়াদার চক্রান্তে কোন্ বে-আইনি কাগজে সরকারি মোহর পড়েছে এর হিসাব রাখা একজনের কর্ম নয়।

 জনা কয়েক গোষ্ঠী সম্পর্কিত বৃদ্ধ জেঠা জেঠি খুড়া খুড়ি আর তিন কনিষ্ঠ ভ্রাতা, সঙ্গে একদল ভগ্নি নিয়ে বৃহৎ পরিবারে সচল সক্ষম উদ্যোগী পুরুষ বলতে তো মাত্র একজনই। রাতে বালিশে মাথা দিলে আজকাল বিপিনচন্দ্রকে হাজারটা চিন্তা একসঙ্গে এসে চেপে ধরে। গ্রামের পশ্চিমে বন কেটে বসতি গড়ে উঠেছে, শাইল উরার বিস্তারও ঘটেছে বিগত শতাব্দীগুলোতে। হাতির পালের আনাগোনা নেই, তাই খেদার কর্মীরা লাঙল নিয়ে নেমে পড়েছে মাঠে, কালো কুচকুচে লম্বা শিং-ওয়ালা স্থানীয় বাঙ্গড় প্রজাতির মহিষ ছাড়াও এরা পেয়েছে গলায় লাল দাগ টানা পাহাড়ি আর আবছা বাদামি রঙের মণিপুরি মহিষ, পেক কাদায় খুব স্বচ্ছন্দ না হলেও বাউশ উরা আর ধান মাড়াইয়ের কাজে এরা দক্ষ। সিলেট-বদরপুর হয়ে কাটিগড়া পেরিয়ে এল মাহিষ্য সম্প্রদায়, জৈন্তাপুর থেকে এল বাশঁবেতের কর্মী, ঘরামি, হাতুড়ি বাটালির কাজে দক্ষ সূত্রধর সম্প্রদায়,