লোহা, রাঙ গলিয়ে ঘটি-বাটি লেম লণ্ঠন ঝালা দেওয়ার মিস্ত্রি, ঠাটারুরা খুলে বসল কারখানা। ডিমারাজ্য থেকে এল আরেক শ্রেণি, চেহারায় জনজাতীয়ের ছাপ, মুখে বাঙ্গালী বুলি, ধর্মে মুসলমান। গ্রামের প্রান্তবর্তী অঞ্চলে এরা ঘর বেঁধে বসতি করল। যাঁরা মাঠে গেল না এদের একদল নদীতে নৌকা ভাসিয়ে দিল, আরেক দল পাতাখাউরি দেবী আর মা নিমাতাকে প্রণাম জানিয়ে বাঁশ কাঠ আর আগর গাছের সন্ধানে ঢুকে গেল গভীর অরণ্যে। হেড়ম্ব রাজসভার কৃপাধন্য বড়ভুইয়াঁর বেটা, মজুমদারের বেটা আর চৌধুরীর বেটাদের উত্তরসূরিরাও নিজ সাধ্যানুযায়ী মিরাশের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন।
নানা ব্যস্ততার মধ্যেও বিপিনচন্দ্র সঙ্গী নিয়ে পায়ে হেঁটে নিজ জমিদারির এলাকাসহ উত্তর পূর্বে চা-করদের এলাকার সীমা ঘুরে দেখতে বেরোলেন। কাছারি আর মণিপুরিদের ঘরবাড়ি দেখে তিনি খুব তৃপ্ত। এত পরিপাটি করে বাঁশ বেত আর খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘর, প্রতিটি বাড়িতে মেয়েরা বসিয়েছে তাঁত, পুরুষেরা আম জাম কাঁঠাল আর কলাবাগান দিয়ে বাড়ি সাজিয়েছে। দুটো নাটমন্দিরের ভিত্তি দেওয়া হয়েছে দেখে তিনি সেরেস্তা থেকে পাঁচ টাকা করে অনুদানও দিয়ে এলেন। আরও খুশি হলেন পশ্চিমাঞ্চলে নাথযোগীদের গ্রামে গিয়ে। হাতে চাটাই পাঠশালায় যাওয়া বাচ্চা দেখে তিনি যারপরনাই খুশি হলেন। সাবাসি দিলেন মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসায় পাঠদানরত মোল্লা সাহেবকে। মাহিষ্য দাস, নমশূদ্র আর পাটনিদের আবার এদিকে বিশেষ রুচি নেই, এটা উপলব্ধি করে তিনি যারপরনাই দুঃখিত হলেন। এ থেকেই তাঁর মাথায় এল ‘গোবিন্দচন্দ্র শিক্ষা ভাণ্ডারের’ পরিকল্পনা। গ্রামে প্রতিষ্ঠিত রাজা ইশকুলে এই দরিদ্র শ্রেনির পড়ুয়াদের সহায়তা না করলে চাষের মরশুম আর ফসল তোলার মরশুমে এদের উপস্থিতি শূন্যই থাকবে। শুধু ব্রাহ্মণ কায়স্থ আর বণিক সন্তান দিয়ে তো আর স্কুল চলে না। বন্ধুবর নন্দলাল বর্মন, গ্রামের হিন্দু মুসলমান মাতব্বর আর খুড়ামহাশয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করতে হবে অদ্য অদ্যই।