১৬
রেলগাড়ি থেকে নামা অবধি সিলেটের প্রতিনিধি, বিদ্যোৎসাহী, উদীয়মান গবেষক, সাহিত্যিকেরা পদ্মনাথ বিদ্যাবিনোদকে ঘিরে রেখেছেন। গৌহাটি থেকে এতদূর ভ্রমণের ধকল কাটিয়ে ওঠার সামান্য অবকাশটুকুও তাঁকে দিতে চাইছেন না। তাঁর স্নান আহারাদি এবং থাকার যাবতীয় আয়োজন করেছেন চন্দমশাই তাঁর নিজের বাড়িতেই। প্রথমে কথা ছিল এ নৈষ্ঠিক ব্রাহ্মণের ব্যবস্থা হবে ভুবনমোহন বিদ্যার্ণব মহাশয়ের বাড়িতে। কিন্তু কামিনীবাবু ইতিমধ্যে নিজের বাড়িতে সমস্ত ব্যবস্থা করে নিয়েছেন শুনে রসিকপ্রবর বিদ্যার্ণব ফোড়ন কাটেন,
—সবই ঠিক আছে, বলছিলাম আপনার যে নিষিদ্ধ পক্ষীর মাংসে অরুচি নেই এটা বিদ্যাবিনোদ কি জানেন?
ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন চন্দমশাই কালক্ষেপ না করেই বলে উঠেন নামকরণের মাধ্যমে অনেক পূর্বেই এ পক্ষীর যবনদোষ নষ্ট করা হয়ে গেছে। আর যা বাকি ছিল সেটাও ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়ে গেছে, কেবল নতুন সংস্কৃত অভিধান গ্রন্থে ওঠার বাকি। ‘রামপাখি’ বলে পরিশোধিত যবনপক্ষীটির নাম যে ‘সীতাপতি বিহঙ্গম’, এটা শুনলে মহামহোপাধ্যায় নিশ্চয়ই খুশি হবেন। তবে সব কথা সব সময় সবাইকে বলা থেকে বিরত থাকা যে বুদ্ধিমানের কাজ, এটা আয়োজকদের যে বিলক্ষণ জানা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এরকম একটা মহাযজ্ঞ সংঘটিত করতে হলে এসব অনেক কথা বিবেচনায় রাখতে হয় বই কি।
ভিড় ঠেলে ব্রাহ্মণ ব্যক্তিটিকে হাতে ধরে প্রায় টেনে হিঁচড়ে বাড়িতে নিয়ে সদর দরজা বন্ধ করে দিলেন। স্নান আহ্নিক করে অতিথিশালায় দুটো আহার করে তিনি এখন ঘুমাবেন সবাইকে জানিয়ে দিলেন। প্রধান অতিথিকে জানালেন,
—আমি যথাসময়েই এসে আপনাকে নিয়ে যাব। আপনার উদ্বোধনী ভাষণ বিকেল তিনটায়