সাহিত্যের জগৎ থেকে পণ্ডিতপ্রবর দেখি একেবারে জাগতিক বিষয়ে নেমে এসেছেন। রায়বাহাদুরের মনে হল কথাগুলো যেন সরাসরি তাঁকেই উদ্দেশ করে বলা,
—পল্লিগ্রামে আমরা নিত্য আহার্য ধান্যাদি শস্যের চাষ ছাড়িয়া দিয়া পাটের চাষ করিতেছি, খড়ের চাল ভাঙিয়া টিনের ঘর করিতেছি। তুলসি ছাড়িয়ে পাতাবাহারের উপবন বানাইতেছি।
বিদ্যাবিনোদের চোখের সামনে কি রায়বাহাদুরের টিনের ছাউনি দেওয়া সুদৃশ্য বাড়ি, সামনে পাতাবাহারের ঝাড় ভেসে উঠছে? বক্তৃতায় উল্লিখিত সোনার গয়না, সাবান, গন্ধতেল, পার্শি শাড়ি, জ্যাকেট শব্দগুলো তাঁর কানকে সরাসরি বিদ্ধ করছে।
তবে একটি বিষয়ে বিপিনচন্দ্রকে কেউ দোষ দিতে পারবে না। শিলচরের ইটখোলায় তিনি একটি বাড়ি করলেও ওখানে একরাত্রির বেশি থাকলেই হাফিয়ে ওঠেন। পল্লি ছেড়ে শহরবাসী হবার কোনও পরিকল্পনা রাখেননি। তাঁর মুখে হাসি ফুটল যখন বিদ্যাবিনোদ বললেন,
—এতদঞ্চলে যাঁরা শিক্ষিত বলিয়া পরিচিত তাঁদের মধ্যে কেহ কেহ স্বীয় বাসভূমি পরিত্যাগের উপক্রম করিতেছেন, ... যাঁহারা বিদেশে থাকেন তাঁহারা বাড়ি আইসেন না ...ইত্যাদি ইত্যাদি।
যথেষ্ট দীর্ঘ ভাষণ, কিন্তু সমবেত শ্রোতারা প্রতিটি শব্দ গভীর অভিনিবেশ সহকারে শুনছেন, যেন সবই তাঁদের প্রাণের কথা। সামাজিক প্রসঙ্গ থেকে এলেন ধর্ম বিষয়ে। এদিকে আবার রায়বাহাদুরের বিশেষ কোনও ভাবনা নেই। ধর্মাধর্মের বিষয়টা তাঁর পুবের বাড়ির খুড়া জেঠারা ভালো বোঝেন অবশ্য তাঁর বাড়িতেও সমস্ত বিধি মতেই দোল দুর্গোৎসব প্রচলিত রয়েছে।
সভাপতির অভিভাষণের শেষ পর্বের কথাগুলোতে রায়বাহাদুর আবার মনোযোগ দিলেন। বিশ্বব্যাপী মারণযজ্ঞের প্রসঙ্গ টেনে এনে মহামহোপাধ্যায়