করতে পারেনি, এখন কাশীবাস শেষ করে বাড়িতে ফিরে এসে হয়েছে স্বদেশি ডাকাতনি। ভাইকে শেখাচ্ছে নানা ধরনের গান, স্বদেশি মন্ত্রও। আর কি বলব, আমাদের বৌমাও এক কাঠি সরেস। লেখাপড়ায় বিশারদ এ বউ যতিকে আটকে রাখা তো দূরে থাক, সমান তালে উৎসাহও দিয়ে যাচ্ছেন। বিপিনবাবু কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। আমাদের সমস্যা হচ্ছে সিলেট ছাড়া এদিকে তো পালটা ঘরও নেই সম্বন্ধ করার। আর সিলেট তো স্বদেশিয়ানার আঁতুড় ঘর। সেখানকার মেয়েরাই বা আর পিছিয়েই থাকবে কেন? দুশ্চিন্তায় পীড়িত বিপিনচন্দ্র মাঝে মাঝে খুড়ামহাশয়ের কাছে গিয়ে বসেন। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে এলেও সাংসারিক জ্ঞান তাঁর টনটনে। তিনিও এ ভ্রাতুষ্পুত্রের পরামর্শ ছাড়া কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন না। আর অপরাপর খুড়াজেঠা যাঁরা আছেন, এরা সবই কেমন যেন খাপছাড়া। এর মধ্যে আবার জগবন্ধুকে নিয়ে হয়েছে মুশকিল। সাহেবদের সঙ্গে চলাফেরা করে ওদের বিষয়বুদ্ধি কিছুই নিতে পারেন নি, কিন্তু মদ্যপানটা রপ্ত করে নিয়েছেন। এ নিয়ে বাড়িতে অশান্তি। জ্যেষ্ঠভ্রাতা তাঁকে বাড়ি থেকে বহিষ্কার করে দিলেও গোপনে আসা যাওয়া কে আটকায়? এমনিতে তো মানুষটা খারাপ নয়, ছেলেমেয়েদের ছেড়ে কতদিন আর বাইরে ঘুরে কাটাবেন?
ইতিমধ্যে জীবনকৃষ্ণের দুই কন্যা ময়না আর সোনাইকে কাছাকাছি মজুমদার বাজার আর সোনাপুরে সেনবাড়িতে পাত্রস্থ করা হয়েছে। এই সোনাপুরের সেনবাড়িতে রায়বাহাদুরের জ্যেষ্ঠা কন্যা বিরজাসুন্দরীরও বিয়ে হল। বেতুকান্দির স্বামী পুরকায়স্থ এবং হাইলাকান্দি-বোয়ালিপারের দেবচৌধুরী বাড়িতে দুই কন্যা সম্প্রদান করে খুড়ামশাই নিশ্চিন্ত। বিপিনচন্দ্রের দ্বিতীয়া কন্যা পড়াশুনায় মেধাবী কিন্তু তাঁকে তো আর দূর বিদেশে পাঠানো যায় না। পুত্র বিনয় এখন কলিকাতায় পড়াশুনা করতে গেছে। পুবের বাড়ির তিন সন্তান, জগৎ-শশী-সত্যেন্দ্র মাতা স্বর্ণময়ী দেবীর প্রভাবে সবারই