পাতা:ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা - সঞ্জীব দেবলস্কর (২০২৩).pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষষ্ঠীতৎপুরুষনামা
৮৫

সাবানে ফেনা কতটুকু হয়, ‘সেরাম অয়েলে’ কাটা-ছেঁড়ার উপসমই বা কতটুকু হয় এসব বিবেচনাকে দূরে সরিয়েই।

 এই যখন পরিস্থিতি, তখন এক শীতের সন্ধ্যায় পুবের বাড়ির চারিদিকে শোনা গেল পুলিশের বুটের আওয়াজ। ঘোড়া চড়ে গোরা সৈন্যদের বিচরণও দেখা গেল। সারা গ্রাম আজ থমথমে। দৃষ্টিহীন পিতা বুঝতে পারলেন, তাঁর পুত্রকে আর ঘরে রাখা যাবে না। বাড়ির চাকরকে পশ্চিমের বাড়িতে পাঠাতে গেলে সে ধমক খেয়ে ফিরে এল। ‘বাইরে যাইবার অ-র-ডা-র নাই।’ কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত কিছু, তাঁর কোন ভাবান্তর নেই। সান্ধ্যকালীন প্রার্থনা গীতি শেষ করে যতীন্দ্র এ-ঘর ওঘর বিচরণ করে সবার সঙ্গে খুব স্বাভাবিক ভাবে কথাও বলছেন। রান্নাঘরে চুপি দিয়ে দেখে এসেছেন মায়ের তত্ত্বাবধানে ওদিকে কী আয়োজন চলছে। পিতৃদেবের ঘরে এসে বিছানার পাশে বসলে বৃদ্ধ লোকটি সাহস দিয়ে বললেন,

 —তোমার কোনও বিপদ ঘটতে পারে না। মনোবল অটুট রাখো। নিজের বিশ্বাসে স্থির থাকো।

 এর বেশি কোন কথা বলার প্রয়োজন হল না। শুধু একবার দিদিকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে তিনি নির্বাক বসে রইলেন।

 রাতের আহারান্তে পিতৃদেব শয্যায় উঠেছেন দেখে যতীন্দ্রমোহন লণ্ঠন টেনে একটি বই খুলে বসলেন, এটা তাঁর বহুদিনের অভ্যাস। ওদিকে কাদের আনাগোনার শব্দ শুনে বাড়ির মেয়ে বউরা আতঙ্কিত হলে রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন দিদি ব্রহ্মময়ী,

 —তোমরা কা’রা? ঘরে কি মা বোন নেই তোমরার, বাড়ির আনাচে কানাচে চোখ রাখো? দূর হও এই মুহূর্তে, নইলে এই দেখ আমার হাতে।

 তিনি হাতে করে যে জিনিসটি উঁচিয়ে ধরলেন সেটা কোন লাঠি বা বন্দুক কিছুই নয়, ঘরদোর পরিষ্কার করতে প্রাত্যহিক ব্যবহারের মুড়া ঝাড়ু,