গ্রামে বলে হুরইন। এর স্পর্শে যতটা না চোট লাগে এর চাইতে অনেক বেশি ক্ষতবিক্ষত করে দেয় মানসম্ভ্রম।
পরদিন ভোর হতে না হতেই বাড়ি জেগে উঠেছে। বৈঠকখানায় এসে বসেছেন দারগা আর দুজন সেপাই। খুব বিনীত ভাবেই তাঁরা তাঁদের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে জানালেন যতিবাবুর স্নান আহারাদি শেষ করে তৈরি হতে যতটুকু সময় চাই তাঁরা দেবেন।
স্নান সেরে দুটো ভাত মুখে দিয়ে খুব পরিপাটি করে পোশাক পরে, ততোধিক পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে ছেলে যখন বাবার পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে এলেন, বাবা তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
—ওরে, কে আছিস? দে মালাছড়া আমার হাতে ধরিয়ে দে, ছেলের গলায় পরিয়ে দেই।
জ্যেষ্ঠা কন্যা তাঁর কথামতো ইতিমধ্যেই ফুল তুলে মালা গেঁথে রেখেছে। ঘরের ভেতরের সমবেত উলুধ্বনি আর কান্নার ধ্বনিতে সৃষ্ট অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মধ্যে যতীন্দ্রমোহন বীরের বেশে বাইরের মণ্ডপে এসে দাঁড়ালেন,
—কোথায় আপনাদের লোকজন? নিন, শিকল পরান।
নমস্কার দিয়ে পুলিশ অফিসার মার্জনা চাইলেন এবং এসব কিছুই লাগবে না বুঝিয়ে দিলেন।
সারা গ্রাম আজ উজাড় হয়ে এসেছে। জমিদার বাড়িতে তিল ধারণের জায়গা আর অবশিষ্ট নেই। ছুটে এসেছেন তারাচরণ, মুন্সি ওয়াজেদ আলি, গ্রামের হিন্দু মুসলমান জনগণ। ব্রাহ্মণবাড়ির মেয়েরা, বউরাও আজ অকুতোভয়। ঘন ঘন উলুধ্বনিতে মুখরিত করে তুললেন সারা গ্রাম। এরই সঙ্গে উঠল ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি। নদীর ওপার থেকে রণচণ্ডীবাড়ির লাগোয়া ডিমাসা গ্রাম উজাড় হয়ে এসেছে এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে। কীর্তনীয়া নকুলরাম বর্মনের সদ্য স্কুলে যাওয়া পুত্র নলিনী বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে সব