হিড়িম্বার প্রণয় থেকে এই ভুবনের প্রবেশ ‘মহাভারতে’র মানচিত্রে। এটাই তো শুনে আসছি। তবুও পাণ্ডব বর্জিত?
বিদ্যাবিনোদকে নিরুত্তর দেখে তিনি আবার বললেন,
—আপনি বলছেন, পর্বতের প্রান্তবর্তী নিচু ভূমি বলেই এ নাম কাছাড়?
—আজ্ঞে হ্যাঁ। শব্দটি সংস্কৃত, ‘কচ্ছ’। উত্তরে আসাম, দক্ষিণে ত্রিপুরা, পূর্বদিকে মণিপুর আর পশ্চিমে সিলেট-জৈন্তা। এরই মধ্যবর্তী কচ্ছ-ভূমি, তাই তো কাছাড়। আপনার কী অভিমত? অবশ্য এসব ক্ষেত্রে আপনাদের মতামতের গুরুত্ব আছে বই কি। আপনারা এখানকার বাসিন্দা, আপনাদের অভিজ্ঞতা হল প্রত্যক্ষ। বলুন তো আপনি কী মনে করেন।
রায়বাহাদুর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন,
—আমার শোনা মতে, এইখানে হেড়ম্ব রাজত্বের আগে কোচ রাজত্বের একটি পর্ব ছিল। ওই কোচ, ধেয়ান বা রাজবংশীরা আমার জমিদারি এলাকায় বসবাসও করছে প্রজা হিসেবে। আপনি কাচাকান্তি দেবীস্থান দর্শন করে এসেছেন—এ দেবীও কিন্তু কোচজাতির আরাধ্যা। ওই কোচ থেকে নামটি হয়েছে কাছাড়, এ আমাদের এখানে প্রচলিত একটা ধারণা। আপনারা কী বলবেন জানি না। আমার পূর্বপুরুষের জানা মতে তা’ই।
রায়বাহাদুরের কথার মধ্যে একটা জোর আছে। কে তাঁর বিরোধিতা করবে? তাঁর গ্রামে এসে আতিথ্য গ্রহণ করেছেন মহামহোপাধ্যায় পদ্মনাথ ভট্টাচার্য বিদ্যাবিনোদ।
ফাল্গুন মাসের দুরন্ত দুপুর। অতিথিকে সামান্য প্রাতরাশ করিয়ে জমিদার মশাই ঢুকেছেন বাড়ির মহাফেজখানায়। বহুদিনের প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে আজ। দূর থেকে ভেসে আসছে কোকিলের ডাক। দোলযাত্রার আর বেশি দিন বাকি নেই। বসন্ত বাতাসে ভেসে আসছে ফুলের সুবাস। দিকে দিকে পলাশ, শিমুল আর রঙ্গনের মেলা। আলোর আভা রাঙিয়ে তুলেছে এ বন্ধ ঘরটিকেও। জমিদারমশাই লোহার সিন্দুকের ভেতর চাবি