মিশ হইয়া। দুনিয়ার সারা মানুষর যদি এক চেহারা, এক বুলি আর এক ধর্ম অইত, কিজানি মন লয়, বিলকুল ভালা লাগত না।
এই কথা বলে আঙুল তুলে দেখায় উইলিয়াম গ্র্যাণ্ট সাহেবের জোড়াপুত্র নাপু মিঞা আর পঙ্কু মিঞার দিকে। সত্যিই, ইয়া তাগড়া দশাসই দুই ব্রিটিশ পুঙ্গব, গায়ের রঙ বাদামি।
—বাপ তাঁর পথো গেছে, নিজ মুলুকো। থাক ব্যাটা আমরার লগে, প্যাক কাদা ছানিয়া দেশি বাঙ্গালর গা ঘেঁসিয়া, আর বারিষার দিন রমানাথ কাছারির লগে আইল ঠেলাঠেলির মাইর করিয়া। লণ্ডনি ফুটানি যে কই গেল তোর!
জেল অফিস থেকে বেরিয়ে মোবেশ্বর আলি সরাসরি রায়বাহাদুরের কাছারি ঘরে।
—যতিবাবু খুব খুশ মিজাজে আছইন। তান অখন বেজান বিরাদর। আমরার বাঙ্গালী জাতি হিন্দু মুসলমান আছইন। সিফাইরা সব খবরই দিল। কিন্তু আপনার দেওয়া চিঠি তাইন লওয়ার আগেই সিফাইয়ে লইয়া গেল গিয়া। আমি কইলাম, রায়বাহাদুরর হুকুম, ‘চিঠি হাতে হাতে দিতাম।’ কিন্তু তারা মানে না। আগে বুলে অফিসো যাইব, তার বাদে তান কাছে।
মোবেশ্বর নিজ বুদ্ধি খাটিয়ে যতিবাবুকে বলেছে,
—বাবু, আপনে মুখ খুললে রায়বাহাদুরে আপনারে ছুটাইয়া লইতা।
এসব শুনে যতীন্দ্রমোহন হাসেন। মোবেশ্বরকে আশ্বস্ত করে বলেন, ‘সাহেবরা কতদিন আর বন্দি করে রাখতে পারবে?’ তাঁদের সংখ্যা যে অনেক।
—বাবু, আসাম থাকি বউৎ বড়ো বড়ো লিডর আনিয়া ফাটকবন্দি করা অইছে এইখানে। এইটা সিফাইর নিজর মুখর কথা, মিছা নায়। আমারে তারা কইছে বাবু। আর আমরার বাবু এই কয়েক দিনেউ তারার লগে মিলি গেছইন।