বণ্টন হয়ে গেলে মাথার উপর কোনও চাপ থাকে না। তবুও বিপিনচন্দ্র পায়ে হেঁটেই পাহাড়ি পথটুকু পেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্তে অটল। তিনি খবর পেয়েছেন গৌহাটি হয়ে শিলং যাওয়ার রাস্তাও যথেষ্ট ভালো হয়েছে। দু-একটা মোটর গাড়ি চলে আজকাল। সাহেবসুবারা এসব চড়ে আসা যাওয়া করছেন। গৌহাটির প্রতিষ্ঠিত বাঙালি ব্যবসায়ী-ঠিকাদার, মুর্শিদাবাদি শেখসাহেব নাকি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাবার জন্য ঐ রাস্তাটিকে আরও একটু মেরামত করে দিয়েছেন।
বিপিনচন্দ্র আশাবাদী আর্চডেইল সাহেবের সঙ্গে তাঁর এবারকার সাক্ষাৎকার ফলপ্রসূ হবেই। বছর ছয়েক আগে অস্থায়ী ভাবে চিফ কমিশনার বা লাটসাহেবের দায়িত্বে থাকাকালীন আর্লসাহেব সিলেট মুরারিচাঁদ কলেজ পরিদর্শন শেষ করে কাছাড় পরিভ্রমণে এলে শিলচর মিউনিসিপ্যালিটির ভাইস চেয়ারম্যান কামিনীকুমার চন্দ, ক্রীড়াবিদ নলিনীমোহন গুপ্ত এবং লোক্যাল বোর্ডের সদস্য বিপিনচন্দ্রও তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন। এবার বিপিনচন্দ্র লাটসাহেবকে পুনরায় কাছাড় পরিদর্শনের সনির্বন্ধ আমন্ত্রণ জানিয়ে এলেন।
লাটসাহেব অবশ্য কথা রেখেছেন। তাঁর কার্যকাল শেষ হবার আগে শুধু কাছাড় পরিক্রমণই নয়, একেবারে লক্ষীপুর পর্যন্ত ভ্রমণসূচিকে সম্প্রসারিত করেন, যার ফলস্বরূপ লক্ষীপুরবাসী পেলেন জমি, বাড়ি এবং নগদ অর্থ সহ একটি স্কুল, নাম আর্ল এম-ই স্কুল। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্ত সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত আলোকবৃত্ত থেকে আনেক দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত অঞ্চলটিতে শিক্ষার একটি প্রদীপ তো জ্বলে উঠল এ বিদেশি প্রশাসকের আনুকূল্যে, পেছনে রয়েছেন দেশীয় মৌজাদার, রায়বাহাদুর বিপিনচন্দ্র, যাঁর বাড়ি এখান থেকে প্রায় চল্লিশ মাইল পশ্চিমে জাটিঙ্গা নদীর তীরে।