ভ্রাতুষ্পুত্র বিনয়চন্দ্র, সোনাপুরের নাতি হরেন্দ্র সেন, অবনী সেন — এই বালকদের ব্যস্ততার শেষ নেই।
জাটিঙ্গামুখে দুপুর থেকে উৎসাহীরা অপেক্ষমান। গান্ধীজির জয়, বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে মিছিল বাড়ির উঠানে এলে মেয়েদের উলুধ্বনি, ধামাইল গীতে একেবারে উৎসবের পরিবেশ। বৃদ্ধ পিতার দৃষ্টিহীন চোখ থেকে ঝরছে আনন্দাশ্রু। দিদি ব্রহ্মময়ী আজ দশভূজা। হাতে বিরাট পানের বাটা, কণ্ঠে স্বদেশি গীত। এরই মাঝে সবাইকে আপ্যায়নও চলছে। একাদশীর চাঁদ সারাবাড়িতে বিছিয়ে দিল আবছা রূপালি আচ্ছাদন। ক্লান্ত যতীন্দ্রমোহনের জন্য ঘরে ঔৎসুক্যচিত্তে বসে আছেন একজন, ওদিকে যাবার কোন অবকাশই হচ্ছে না। কনিষ্ঠ ভ্রাতা দাদাকে কানে কানে কী যেন বলে গেলে তিনি হঠাৎ একটু চঞ্চল হয়ে উঠলেন।
২৭
জাটিঙ্গাপারের এই গ্রামটিতে স্বদেশ, স্বরাজ আর বয়কট এ তিনটি শব্দ প্রাত্যহিক কথোপকথনে এসে সংযোজিত হল। যতিবাবু জেল থেকে শিখে এসেছেন ব্রহ্মসংগীত, শুদ্ধ উচ্চারণে গীতা পাঠ, দীক্ষিত হয়েছেন রবীন্দ্রকাব্যে, স্বদেশি সাহিত্যে। সন্ধ্যাবেলা বাড়ির মণ্ডপে এসবের অনুশীলন শুরু হল নিয়ম করে। সামিল হলেন প্রতিবেশী সহ অন্যান্য গ্রামবাসীও। কয়েকটি নাম কীর্তনের পর জেলের আসরের মতো একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করে দিলে তো বয়স্করাও বেশ অংশ নিচ্ছেন। অরুণাচল আশ্রমের দয়ানন্দ সরস্বতীও নাকি এ আসরে উপস্থিতি দিয়ে গেছেন। সিলেটে পুলিশের তাড়না খেয়ে এদিকে এসে নতুন উদ্যমে তিনি স্বদেশি কাজ শুরু করেছেন। আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক মুক্তিকুমার ঘন ঘনই হাজির হচ্ছেন।