ষ্ট্যালিন
অনেক সাম্যবাদ-বিরোধী লেখক “ব্যক্তিগত ক্ষমতা লোভ এবং ডিক্টেটরশিপ” বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। ডিক্টেটরশিপ কথাটা আমাদের দেশেও অত্যন্ত শিথিল ভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আন্তর্জ্জাতিক কম্যুনিষ্ট পার্টিতে এবং সোভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রে তথাকথিত ডিক্টেটরশিপ সম্ভবপর নহে; কেন না কম্যুনিজম ও সোভিয়েট-তন্ত্র একটা নির্দ্দিষ্ট মত ও পথ ধরিয়া চলিয়াছে! কাজেই অতি শক্তিশালী ব্যক্তিকেও এই ব্যবস্থার সাধারণ সেবকরূপে কাজ করিতে হয়। ব্যক্তিগত ক্ষমতা লোভ চরিতার্থ করিবার অবকাশ ইহাতে নাই। ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশিকে কম্যুনিজম বলিয়া চালান অসম্ভব।
মার্কসবাদের বিভিন্ন প্রকার ব্যাখ্যা অবশ্য হইতে পারে। কোন বিশেষ ব্যাপারে পথ-নির্দ্দেশ সম্বন্ধে, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সঙ্ঘ পরিচালনে নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতভেদও ঘটিতে পারে এবং সোভিয়েট রাশিয়ায় তাহা যে ঘটে নাই এমন নহে। পরবর্ত্তী ঘটনা এবং অভিজ্ঞতার দৃষ্টিতে সোভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালকগণ প্রকাশ্যে ভুল ত্রুটি স্বীকার করিয়াছেন এবং তাহার সংশোধন করিয়াছেন। সাম্যবাদী নেতারা কখনও কোন কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করেন নাই। অস্ত্রবলে বিরুদ্ধবাদীদের দমন করেন নাই কিংবা মুসোলিনী ও হিটলারের ন্যায় ক্ষমতার পথ নিষ্কণ্টক করিতে ভাড়াটিয়া গুপ্তঘাতকের সাহায্য গ্রহণ করেন নাই। গুপ্ত ষড়যন্ত্র, ছল, চাতুরী, উৎকোচ এবং দলের নেতাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচর নিয়োগ কিংবা আইন সভায় সশস্ত্র প্রহরী মোতায়েন অথবা নিশীথ শয্যায় প্রসুপ্ত শত্রুকে হত্যা দ্বারা কেহ রাজা, সম্রাট, ডুচে অথবা ফুরার্ হইতে পারে, কিন্তু এই সকল উপায়ে কম্যুনিষ্ট পার্টির সম্পাদকের পদ লাভ করা যায় না। কেননা ঐ সম্মানের পদ ভীতির উপর প্রতিষ্ঠিত নহে। পার্টির শ্রদ্ধা ও সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত।
৯৭