পাতা:ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ষ্ট্যালিন

 ঊনবিংশ শতাব্দীর মানুষের এই দুই বিপরীত চিন্তাধারা আজ পর্যন্ত্য তাহার মূল বৈশিষ্ট্য বজায় রাখিয়া চলিয়া আসিতেছে। ইতিহাসের গতিপথে পথ ও উপায়ের কিছু পরিবর্ত্তন হইয়াছে মাত্র। কত যুদ্ধ ও বিপ্লব ব্যর্থ হইয়াছে, অকারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়াছে। মানুষের শ্রমার্জ্জিত কত ধন-সম্পদ ধ্বংস হইয়া গিয়াছে অথচ সভ্য মানব এই ধ্বংসকে, এই পণ্ড শ্রমকে পরিহার করিবার সম্যক পন্থা গ্রহণ করে নাই। বিগত মহাযুদ্ধের পরও ইউরোপে রাষ্ট্র ও সমাজের পরিবর্ত্তন আমরা দেখিয়াছি। বহু খণ্ড ও বিক্ষিপ্ত বিপ্লবের শোচনীয় অবসানও দেখিয়াছি। একমাত্র মার্কসবাদী বিপ্লবীরাই জয়ী হইয়া এক বিশাল ভূখণ্ডে নবীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করিল। ফলে আন্তর্জ্জাতিক সমাজতন্ত্রবাদ সুতীক্ষ্ণ অস্ত্রের মত ধনতন্ত্রের চক্ষুর সম্মুখে বিভীষিকার সৃষ্টি করিতে লাগিল। বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদ অতিক্রম করিয়া যখন ধনতন্ত্রবাদ জগদ্ব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের সম্মুখীন হইল তখন ধনতন্ত্রের বুদ্ধিমান দালালেরা প্রচার করিতে লাগিল মাঝে মাঝে সাময়িক ভাবে এরূপ সঙ্কট দেখা দিবেই। অতীতেও কয়েকবার ধনতন্ত্রবাদ এইরূপ সঙ্কটের সম্মুখীন হইয়াছে এবং তাহা অতিক্রম করিয়াছে। কিন্তু সত্য আবৃত রহিল না, স্পষ্টই বোঝা গেল ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঘুণ ধরিয়াছে। তাহার কাণ্ডে, শাখাপ্রশাখায় জরা ও বার্দ্ধক্যের ছায়া পড়িয়াছে, মূল শুকাইয়া আসিতেছে। প্রাচীন উপায়ে পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা অচল হইবার উপক্রম হইয়াছে। রব উঠিল—হাল ছাড়িও না, পণ্য উৎপাদন করিতে থাক। বিক্রয়ের বাজারে হুলুস্থুল বাধাও। কিন্তু ক্রেতা1-বিক্রেতার মধ্যে সর্ব্বাঙ্গীন সামঞ্জস্য বিধান অসম্ভব হইয়া উঠিল; পণ্য গুদামজাত হইয়া পণ্যউৎপাদনকারী দেশগুলির শ্বাসরোধ করিতে লাগিল। আন্তর্জ্জাতিক

১২৯