পাতা:ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষ্ট্যালিন

এই ব্যর্থতা হইতে “পপুলিষ্ট” আন্দোলনের সূচনা হয়। পশ্চিমে ইউরোপের নকল না করিয়া রাশিয়ান্ ঐতিহ্য ও পারম্পর্য্যের অনুসরণে পল্লী সমিতি ও শ্রমজীবি-সঙ্ঘ গঠিত হইল—এই পথে রাশিয়ার জনসাধারণ “ধনতন্ত্রের বেদনাময় পথে পরিভ্রমণ না করিয়াও” সমাজতন্ত্রবাদে উত্তীর্ণ হইবে। ১৮৭০ হইতে ১৮৮১ সাল পর্যন্ত ‘জমি ও স্বাধীনতা’, ‘জনসাধারণের স্বাধীনতা’ প্রভৃতি দাবীর ভিত্তিতে “পপুলিষ্ট” আন্দোলন বোমা এবং সন্ত্রাসবাদ দ্বারা রাশিয়ার সম্রাট, প্রাসাদ ও রাজশক্তিকে বিচলিত করিয়া তোলে। রাশিয়ার বাহিরে এই আন্দোলনকারীরা ‘নিহিলিষ্ট’ বলিয়া পরিচিত হন। ১৮৮১ সালে রুশ সম্রাট দ্বিতীয় আলেক‍্জাণ্ডারের হত্যাকাণ্ডের পর রুশ গভর্ণমেণ্ট ‘পপুলিষ্ট’ সঙ্ঘগুলি ধ্বংস করিয়া ফেলিল এবং ফলে সাহিত্যিকদের কল্পনায় ছাড়া উহার আর কোন অস্তিত্ব রহিল না।

 তরুণ বয়সে লেনিন ‘পপুলিষ্ট’ মহলে মেলামেশা করিতেন। তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আলেকজাণ্ডার উলিয়ানফ্ ‘জনসাধারণের স্বাধীনতা’ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এই অপরাধে ১৮৮৭ সালে তিনি প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হন। লেনিনের ভগ্নী মারিয়া উলিয়ানফ্ বলেন, যখন এই দুঃসংবাদ আসিল তখন সপ্তদশবর্ষীয় বালক ভ্লাডিমির ইলিচ (লেনিন) দূর দিগ‍্বলয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া অস্ফুট স্বরে বলিয়াছিলেন, “না, আমাদিগকে স্বতন্ত্র পথ বাছিয়া লইতে হইবে; এপথ আমাদের নহে।”

 এই স্বতন্ত্র পথ হইতেছে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদ। রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রাচীন আদর্শ, বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণীর অন্যায় অধিকার কাড়িয়া লওয়া, সাম্য এবং সার্ব্বজনীন ভ্রাতৃত্ব প্রভৃতি মতবাদের সংস্কার ও সামঞ্জস্য বিধান করিয়া কার্ল মার্কস্ ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে