তাঁহার ছিলনা। নৈরাশ্যের সহিত, পরাজয়ের সহিত সর্ব্বদাই তাঁহাকে যুদ্ধ করিতে হইত। অস্ত্রবল-সহায় বিপুল জার সাম্রাজ্যের শক্তির সম্মুখে মুষ্টিমেয় যুবক বিপ্লবী কি করিবে? কিন্তু ষ্ট্যালিন মার্কসবাদের নির্ম্মল বারি অঞ্জলি ভরিয়া পান করিয়াছিলেন। ঐতিহাসিক ঘটনা পরম্পরার মধ্য দিয়া যে বিরুদ্ধতা সমাজ ও রাষ্ট্র বহন করিতেছে সেই অসামঞ্জস্যের পরিসমাপ্তি অবশ্যম্ভাবী। মার্কসবাদ তাঁহার নিকট কোন জটিল তত্ত্ব ছিলনা, তিনি ইহাকে একটী সরল কার্যপ্রণালীরূপে বিশ্বাস করিতেন— যাহা আপন বলে পথ কাটিয়া মানবের মুক্তি আনয়ন করিবে। মার্কসবাদের মধ্যে আধ্যাত্মিক অতীন্দ্রিয় রহস্য অথবা ভাবুকের কল্প-স্বর্গ বলিয়া কিছু নাই। মার্কসীয় পদ্ধতি ঐতিহাসিক কার্য্য-কারণ-শৃঙ্খলা অনুসন্ধান করিয়া সত্য ও বাস্তবের দৃষ্টিতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যার মীমাংসার চেষ্টা করে। এই কারণেই মার্কসবাদীদের পরিকল্পনা বৈজ্ঞানিক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁহারা কখনও বিরক্ত বা সংশষাকুল হন না। এখানে তথাকথিত অন্ধ বিশ্বাসের স্থান নাই। অতীতের অন্যান্য বিপ্লবীদলের সহিত মার্কসবাদীদের ইহাই পার্থক্য। তাঁহারা ব্যক্তিগত আক্রোশ, অসূয়া বা ভাবাবেগের দ্বারা চালিত হন না। ব্যক্তিগতভাবে কোন ধনী সম্রাট বা শাসনকর্ত্তা কি করিলেন, কি বলিলেন তাহা তাঁহাদের চিত্তে অতি অল্প প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে। সমালোচকের নিরপেক্ষ দৃষ্টি লইয়া তাঁহারা সামাজিক শক্তিগুলিকে বিচার করেন এবং এই বিচারের সিদ্ধান্ত তাঁহাদিগকে বিপ্লবী করে। ইহার মধ্যে ঘৃণা উত্তেজনা এবং ঔদার্য্যের স্থান নাই। সামাজিক অবিচার স্বাভাবিকভাবেই তাঁহাদের নিকট অসহনীয় বোধ হয়। মানুষের মন দুর্জ্ঞেয় ও দুরবগাহ, সাধারণভাবে তাহা অন্যায়, অবিচার, পীড়নের প্রতি বীতরাগ হইলেও একপ্রকার সামঞ্জস্য করিয়া লয়; কিন্তু মার্কস্পন্থী এই
পাতা:ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার.pdf/২০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষ্ট্যালিন
১২