পাতা:ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষ্ট্যালিন

শাসনতন্ত্র এক নকল পার্লামেণ্ট প্রতিষ্ঠা করিল। সঙ্গে সঙ্গে একদল উদারনৈতিক মডারেট রাশিয়ায় নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অভিনয় করিতে লাগিলেন। সাম্রাজ্ঞীর করধৃত পুত্তলিকা অজ্ঞ ও নির্ব্বোধ জার খৃষ্টীয় ধর্মযাজক এবং ঐ শ্রেণীর ব্যক্তিদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হইয়া ঘোষণা করিলেন কাহাকেও মুক্তি দেওয়া হইবে না, তাঁহার নিকট কেহ যেন মুক্তি ভিক্ষা করিতে না আসে। জারের মন্ত্রীরা সর্ব্ববিধ উপায়ে শ্রমিক ও কৃষকদের পীড়ন করিতে লাগিলেন যাহাতে কোন প্রকারে তাহাদের মধ্যে সঙ্ঘশক্তি ও আত্মচেতনা জাগ্রত না হয়।

 ডিসেম্বর মাসে মস্কৌএর জনসাধারণের সশস্ত্র বিদ্রোহ দলিত হইবার পর বৈপ্লবিক শ্রমিক আন্দোলনে নৈরাশ্যের প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। পিটার্সবার্গের ক্লান্ত শ্রমিকেরা ধর্ম্মঘট করিতে পারিল না। মস্কৌর বিদ্রোহীরা ইহাতে রুষ্ট হইল। লেনিন দেখিলেন, প্ররোচকগণ খণ্ড বিক্ষিপ্ত চেষ্টায় শ্রমিকদিগকে উত্তেজিত করিয়া জার সৈন্যদিগকে হত্যাকাণ্ডের সুযোগ দিতেছে। এই ত্রাসের বিভীষিকার মধ্যেও লেনিন নির্দ্দেশ দিলেন, বর্ত্তমানে, উত্তেজিত না হইয়া দ্বিতীয় বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুতিই আমাদের কর্ত্তব্য। কিন্তু মেনশেভিকেরা গণ-বিদ্রোহের উপর আস্থা হারাইয়া ফেলিল। প্রচণ্ড দমন-নীতি যখন লোকের মনোবল ভাঙ্গিবার উপক্রম করিতেছে তখন সংস্কারপন্থী সমাজতন্ত্রী মেনশেভিকরা মার্কসের বুলি আওড়াইয়া নিয়মতান্ত্রিক সুবিধাবাদের পথে শ্রমিকসঙ্ঘগুলিকে আহ্বান করিতে লাগিল। ডিসেম্বর বিদ্রোহকে তাহারা “নৈরাশ্যের প্রতিক্রিয়া” এবং গুরুতর ভ্রম বলিয়া উল্লেখ করিয়া বলশেভিকদের নিন্দা করিতে লাগিল। সশস্ত্র বিদ্রোহের পথে অগ্রসর হওয়া উচিত নহে, ইহাই ছিল তাহাদের যুক্তি। লেনিন তখন নির্ব্বাসনে।

২৯