পাতা:ষ্ট্যালিন - সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ষ্ট্যালিন

গেল। এই গ্রামে মাত্র দুই তিনটি বাড়ী ছিল এবং বৎসরের মধ্যে দুই তিন মাস ব্যতীত সর্ব্বসময় ইহা বরফে আচ্ছন্ন থাকে। তিনি প্রায় গল্পের রবিনসন্ ক্রুসোর মত এই গ্রামে বাস করিতে লাগিলেন। নিষ্কর্ম্মা বসিয়া না থাকিয়া তিনি মাছ ধরিবার ও শিকার করিবার যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও তৈয়ারী করিলেন এবং সমস্ত দিন ঐ কার্য্যেই অতিবাহিত করিতেন। স্বয়ং রন্ধন করিতেন এবং কুঠার লইয়া জ্বালানীকাঠ সংগ্রহ করিতেন। অবসর সময়ে তাঁহার কুটীরে বসিয়া মার্কসবাদ ও রাশিয়ার সমস্যা সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখিতেন এবং তাঁহার পাহারাদার পুলিশ নির্ব্বোধ দৃষ্টি মেলিয়া অবাক হইয়া দেখিত। তাঁহাকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এই নির্ব্বাসনে থাকিতে হয়। এই সময়ে একদিকে মহাযুদ্ধের হানাহানি পশ্চিম দিগন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন করিয়াছে, অন্যদিকে পূর্ব্ব দিগন্ত দ্বিতীয় রুশ বিপ্লবের অরুণচ্ছটায় উদ্ভাসিত।

 গোয়েন্দা, গুপ্তচর, গ্রেফতার, কারাগার, পুনঃ পুনঃ পলায়ন এবং গুপ্তভাবে বৈপ্লবিক কার্য্য পরিচালনা ষ্ট্যালিনের জীবনের এই রহস্যময় ও কর্ম্মবহুল অধ্যায়ের বিবরণ অসম্পূর্ণ—কেননা তিনি ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়ে কোন কথাই বলেন নাই। যে সকল অবস্থার মধ্যে তিনি বাস করিয়াছেন, যে ভাবে বিভিন্ন শ্রেণীর নরনারীর সম্পর্কে আসিয়াছেন, তাহা যদি তিনি লিপিবদ্ধ করিতেন, তাহা হইলে তাহা উপন্যাসের মতই রোমাঞ্চকর ঘটনায় পরিপূর্ণ হইত। সুগঠিত দেহ, ধীর মস্তিষ্ক, অদম্য ইচ্ছা শক্তি এবং অপরাহত শৌর্য্য্যবলেই ষ্ট্যালিন সমস্ত অত্যাচার ও পীড়ন সহ্য করিয়া রুশিয় গণবিপ্লবকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করিয়াছেন। মার্কস্ লেনিনের আদর্শকে বাস্তব রূপ দিবার ঐতিহাসিক দায়িত্ব যে-ব্যক্তি গ্রহণ করিয়াছিলেন, আমরা দেখিয়াছি কিশোর বয়স

৪৪