সমগ্র ইউরোপ যখন রণহিংসায় উন্মত্ত, পর-জাতিবিদ্বেয়ে অন্ধ, তখন একমাত্র বলশেভিক পার্টি লেনিনের নেতৃত্বে আন্তর্জ্জাতিকতার রক্তপতাকা ঊর্দ্ধে তুলিয়া রাখিলেন। সুদূর সাইবেরিয়ায় নির্ব্বাসিত ষ্ট্যালিন নিষিদ্ধ উপায়ে লেনিনকে সমর্থন করিলেন, পার্টির অভ্যন্তরস্থ সুবিধাবাদীদিগের কার্য্যকলাপের তীব্র নিন্দা করিতে লাগিলেন। এইকালে তাঁহার রচিত প্রবন্ধগুলি ছদ্মনামে পার্টির পত্রিকায় প্রকাশিত হইত।
মহাযুদ্ধের আঘাতে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার অর্থনৈতিক দৌর্ব্বল্য সাংঘাতিক হইয়া দেখা দিল। যন্ত্রশিল্প এবং যুদ্ধ পরিচালনায় জার গভর্ণমেণ্টের অক্ষমতা দিকে দিকে আত্মপ্রকাশ করিল। দৃঢ়তা ও বীরত্বের সহিত যুদ্ধ করিয়াও রুশসৈন্য বারম্বার পরাজিত হইতে লাগিল। দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা সমরবিভাগের পক্ষে বিপজ্জনক হইয়া উঠিল, সৈন্যরা উপযুক্ত রসদ ও গুলী বারুদ পাইল না। কেবল বলশেভিক পার্টি নহে, মধ্যশ্রেণীর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও বলিতে লাগিলেন, জার গভর্ণমেণ্ট দেউলিয়া হইয়া পড়িয়াছে। খাদ্যের অভাবে শ্রমিকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দিল। ধর্ম্মঘট বিস্তার লাভ করিল, পুলিশ গুলী চালাইয়া ধর্ম্মঘট বন্ধ করিতে অক্ষম হইল।
অভিজাত শ্রেণীর পরামর্শ অগ্রাহ্য করিয়া জার দমননীতিতে অটুট রহিলেন। এই স্ত্রৈণ কাপুরুষ নির্ব্বোধ লোকটির দেশের আভ্যন্তরীণ অবস্থা সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিল না। “যদি অর্দ্ধেক রাশিয়াকে ফাঁসী কাষ্ঠে লট্কাইতে হয়, তাহা হইলেও আমি অটল থাকিব”—এই কথা বলার দুইদিন পরই রুশজাতির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা পদত্যাগ করিলেন। ১৯১৭-র ফেব্রুয়ারী মাসের বিপ্লবের স্রোতে প্রাচীন ব্যবস্থা ভাসিয়া গেল। এই বিপ্লবে অভিজাতবংশীয় গ্রাণ্ড ডিউক হইতে মধ্যশ্রেণীর