পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার হেরফের

কী করিয়া এড়াইবে কিছুতেই ভাবিয়া পাওয়া যায় না। এক তো ইংরেজি ভাষাটা অতিমাত্রায় বিজাতীয় ভাষা। শব্দবিন্যাস পদবিন্যাস সম্বন্ধে আমাদের ভাষার সহিত তাহার কোনোপ্রকার মিল নাই। তাহার পরে আবার ভাববিন্যাস এবং বিষয়প্রসঙ্গও বিদেশী। আগাগোড়া কিছুই পরিচিত নহে, সুতরাং ধারণা জন্মিবার পূর্বেই মুখস্থ আরম্ভ করিতে হয়। তাহাতে না-চিবাইয়া গিলিয়া খাইবার ফল হয়।

 আবার নিচের ক্লাসে যে-সকল মাস্টার পড়ায় তাহারা কেহ এণ্ট্রেস-পাশ, কেহবা এণ্ট্রেস-ফেল; ইংরেজি ভাষা, ভাব, আচারব্যবহার এবং সাহিত্য তাহাদের নিকট কখনোই সুপরিচিত নহে।

 বেচারাদের দোষ দেওয়া যায় না। Horse is a noble animal—বাংলায় তর্জমা করিতে গেলে বাংলারও ঠিক থাকে না, ইংরেজিও ঘোলাইয়া যায়। কথাটা কেমন করিয়া প্রকাশ করা যায়। ঘোড়া একটি মহৎ জন্তু, ঘোড়া অতি উঁচুদরের জানোয়ার, ঘোড়া জন্তুটা খুব ভালো— কথাটা কিছুতেই তেমন মনঃপূত রকম হয় না, এমন স্থলে গোঁজামিলন দেওয়াই সুবিধা। আমাদের প্রথম ইংরেজি শিক্ষায় এইরূপ কত গোঁজামিলন চলে তাহার আর সীমা নাই। ফলত অল্পবয়সে আমরা যে ইংরেজিটুকু শিখি তাহা এত যৎসামান্য এবং এত ভুল যে তাহার ভিতর হইতে কোনো প্রকারের রস আকর্ষণ করিয়া লওয়া বালকদের পক্ষে অসম্ভব হয়— কেহ তাহা প্রত্যাশাও করে না। মাস্টারও বলে ছাত্রও বলে, ‘আমার রসে কাজ নাই, টানিয়াবুনিয়া কোনো মতে একটা অর্থ বাহির করিতে পারিলে এ-যাত্রা বাঁচিয়া যাই, পরীক্ষায় পাশ হই, আপিসে চাকরি জোটে।’

 তবে ছেলেদের ভাগ্যে বাকি রহিল কী। যদি কেবল বাংলা শিখিত তবে রামায়ণ মহাভারত পড়িতে পাইত; যদি কিছুই না শিখিত তবে খেলা করিবার অবসর থাকিত, গাছে চড়িয়া, জলে ঝাঁপাইয়া, ফুল