পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মেঘদূত
১০৭

মুখে চাহিয়া আছি— মাঝখানে আকাশ এবং মেঘ, এবং সুন্দরী পৃথিবীর রেবা-সিপ্রা, অবন্তী-উজ্জয়িনী, সুখ-সৌন্দর্য-ভোগ-ঐশ্বর্যের চিত্রলেখা; যাহাতে মনে করাইয়া দেয় কাছে আসিতে দেয় না, আকাঙ্ক্ষার উদ্রেক করে নিবৃত্তি করে না। দুটি মানুষের মধ্যে এতটা দূর।

 কিন্তু একথা মনে হয়, আমরা যেন কোনো এক কালে একত্র এক মানসলোকে ছিলাম, সেখান হইতে নির্বাসিত হইয়াছি। তাই বৈষ্ণব কবি বলেন, তোমায় ‘হিয়ার ভিতর হইতে কে কৈল বাহির।’ এ কী হইল। যে আমার মনোরাজ্যের লোক, সে আজ বাহিরে আসিল কেন। ওখানে তো তোমার স্থান নয়। বলরাম দাস বলিতেছেন, ‘তেঁই বলরামের, পহু, চিত নহে স্থির।’ যাহারা একটি সর্বব্যাপী মনের মধ্যে এক হইয়াছিল, তাহারা আজ সব বাহির হইয়া পড়িয়াছে। তাই পরস্পরকে দেখিয়া চিত্ত স্থির হইতে পারিতেছে না— বিরহে বিধুর, বাসনায় ব্যাকুল হইয়া পড়িতেছে। আবার হৃদয়ের মধ্যে এক হইবার চেষ্টা করিতেছি, কিন্তু মাঝখানে বৃহৎ পৃথিবী।

 হে নির্জন গিরিশিখরের বিরহী, স্বপ্নে যাহাকে আলিঙ্গন করিতেছ, মেঘের মুখে যাহাকে সংবাদ পাঠাইতেছ, কে তোমাকে আশ্বাস দিল যে, এক অপূর্ব সৌন্দর্যলোকে শরৎপূর্ণিমারাত্রে তাহার সহিত চিরমিলন হইবে। তোমার তো চেতন-অচেতনে পার্থক্য জ্ঞান নাই, কী জানি, যদি সত্য ও কল্পনার মধ্যেও প্রভেদ হারাইয়া থাক।

 ১২৯৮