পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শকুন্তলা
১১৭

 শকুন্তলা পশ্চাৎ হইতে বাধা পাইয়া কহিল, “আরে, কে আমার কাপড় ধরিয়া টানে।”

 কণ্ব কহিলেন, “বৎসে,—

ইঙ্গুদির তৈল দিতে স্নেহসহকারে
কুশক্ষত হলে মুখ যার,
শ্যামাধান্যমুষ্টি দিয়ে পালিয়াছ যারে
এই মৃগ পুত্র সে তোমার।”

 শকুন্তলা তাহাকে কহিল, “ওরে বাছা, সহবাসপরিত্যাগিনী আমাকে আর কেন অনুসরণ করিস। প্রসব করিয়াই তোর জননী যখন মরিয়াছিল, তখন হইতে আমিই তোকে বড়ো করিয়া তুলিয়াছি। এখন আমি চলিলাম, তাত তোকে দেখিবেন, তুই ফিরিয়া যা।”

 এইরূপে সমুদয় তরুলতা মৃগপক্ষীর নিকট হইতে বিদায় লইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে শকুন্তলা তপোবন ত্যাগ করিয়াছে।

 লতার সহিত ফুলের যেরূপ সম্বন্ধ, তপোবনের সহিত শকুন্তলার সেইরূপ স্বাভাবিক সম্বন্ধ।

 অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকের অনসূয়া প্রিয়ংবদা যেমন, কণ্ব যেমন, দুষ্যন্ত যেমন, তপোবনপ্রকৃতিও তেমনি একজন বিশেষ পাত্র। এই মূক প্রকৃতিকে কোনো নাটকের ভিতরে যে এমন প্রধান— এমন অত্যাবশ্যক স্থান দেওয়া যাইতে পারে, তাহা বোধ করি সংস্কৃতাহিত্য ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় নাই। প্রকৃতিকে মানুষ করিয়া তুলিয়া তাহার মুখে কথাবার্তা বসাইয়া রূপকনাট্য রচিত হইতে পারে কিন্তু প্রকৃতিকে প্রকৃত রাখিয়া তাহাকে এমন সজীব, এমন প্রত্যক্ষ, এমন ব্যাপক, এমন অন্তরঙ্গ করিয়া তোলা, তাহার দ্বারা নাটকের এত কার্যসাধন করাইয়া লওয়া, এ তো অন্যত্র দেখি নাই।

 উত্তরচরিতেও প্রকৃতির সহিত মানুষের আত্মীয়বৎ সৌহার্দ এইরূপ