পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
সংকলন

 এই-সমস্ত ছড়ার মধ্যে একটি ছত্রে একটি কথায় সুখদুঃখের একএকটি বড়ো বড়ো অধ্যায় উহ্য রহিয়া গিয়াছে। নিম্নে যে-ছড়াটি উদ্ধৃত করিতেছি তাহার দুই ছত্রে আদ্যকাল হইতে অদ্যকাল পর্যন্ত বঙ্গীয় জননীর কতদিনের শোকের ইতিহাস ব্যক্ত হইয়াছে।

দোল্ দোল্ দুলুনি।
রাঙা মাথায় চিরুনি।
বর আসবে এখনি।
নিয়ে যাবে তখনি।
কেঁদে কেন মরো।
আপনি বুঝিয়া দেখো কার ঘর করো।

 একটি শিশুকন্যাকেও দোল দিতে দিতে দূর ভবিষ্যৎবর্তী বিচ্ছেদসম্ভাবনা স্বতই মনে উদয় হয় এবং মায়ের চক্ষে জল আসে। একমাত্র সান্ত্বনার কথা এই যে, এমনি চিরদিন হইয়া আসিতেছে। তুমিও একদিন মাকে কাঁদাইয়া পরের ঘরে চলিয়া আসিয়াছিলে,আজিকার সংসার হইতে সেদিনকার নিদারুণ বিচ্ছেদের সেই ক্ষতবেদনা সম্পূর্ণ আরোগ্য হইয়া গিয়াছে;—তোমার মেয়েও যথাকালে তোমাকে ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে এবং সে-দুঃখও বিশ্বজগতে অধিক দিন স্থায়ী হইবে না।

 পুঁটুর শ্বশুরবাড়ি-প্রয়াণের অনেক ছবি এবং অনেক প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। সে-কথাটা সর্বদাই মনে লাগিয়া আছে।

পুঁটু যাবে স্বশুরবাড়ি সঙ্গে যাবে কে।
ঘরে আছে কুনো বেড়াল কোমর বেঁধেছে।
আম কাঠালের বাগান দেব ছায়ায় ছায়ায় যেতে।
চার মিন্‌সে কাহার দেব পালকি বহাতে।
সরু ধানের চিঁড়ে দেব পথে জল খেতে।