পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কাব্যের তাৎপর্য
১৯৫

আকাশতলবর্তী কোনো এক কাল্পনিক পুরুষকে সম্বোধন করিয়া কহিল, “যদি তাৎপর্যের কথা বলো, তোমার এবারকার কবিতার আমি একটা তৎপর্য গ্রহণ করিয়াছি।”

 ক্ষিতি কহিল, “আগে বিষয়টা কী বলো দেখি। কবিতাটা পড়া হয় নাই, সে-কথাটা কবিবরের ভয়ে এতক্ষণ গোপন করিয়াছিলাম, এখন ফাঁস করিতে হইল।”

 ব্যোম কহিল, “শুক্রাচার্যের নিকট হইতে সঞ্জীবনী-বিদ্যা শিখিবার নিমিত্ত বৃহস্পতির পুত্র কচকে দেবতারা দৈত্যগুরুর আশ্রমে প্রেরণ করেন। সেখানে কচ সহস্রবর্ষ নৃত্যগীতবাদ্য দ্বারা শুক্রতনয়া দেবযানীর মনোরঞ্জন করিয়া সঞ্জীবনী-বিদ্যা লাভ করিলেন। অবশেষে যখন বিদায়ের সময় উপস্থিত হইল তখন দেবযানী তাঁহাকে প্রেম জানাইয়া আশ্রম ত্যাগ করিয়া যাইতে নিষেধ করিলেন। দেবযানীর প্রতি অন্তরের আসক্তিসত্ত্বেও কচ নিষেধ না মানিয়া দেবলোকে গমন করিলেন। গল্পটুকু এই। মহাভারতের সহিত একটুখানি অনৈক্য আছে, কিন্তু সে সামান্য।”

 ক্ষিতি কিঞ্চিৎ কাতরমুখে কহিল, “গল্পটি বারো হাত কাঁকুড়ের অপেক্ষা বড়ো হইবে না, কিন্তু আশঙ্কা করিতেছি, ইহা হইতে তেরো হাত পরিমাণের তাৎপর্য বাহির হইয়া পড়িবে।”

 ব্যোম ক্ষিতির কথায় কর্ণপাত না করিয়া বলিয়া গেল, “কথাটা দেহ এবং আত্মা লইয়া।”

 শুনিয়া সকলেই সশঙ্ক হইয়া উঠিল।

 ক্ষিতি কহিল, “আমি এইবেলা আমার দেহ এবং আত্মা লইয়া মানে মানে বিদায় হইলাম।”

 সমীর দুই হাতে তাহার জামা ধরিয়া টানিয়া বসাইয়া কহিল, “সংকটের সময় আমাদিগকে একলা ফেলিয়া যাও কোথায়।”