পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৌতুকহাস্য
২০৫

সংগত উপলক্ষ্যের অপেক্ষা রাখে না। মেয়েরা অল্প কারণে কাঁদিতে জানে এবং বিনা কারণে হাসিতে পারে; কারণ ব্যতীত কার্য হয় না, জগতের এই কড়া নিয়মটা কেবল পুরুষের পক্ষেই খাটে।”

 সমীর নিঃশেষিত পাত্রে দ্বিতীয়বার চা ঢালিয়া কহিল, “কেবল মেয়েদের হাসি নয়, হাস্যরসটাই আমার কাছে কিছু অসংগত ঠেকে। দুঃখে কাঁদি, সুখে হাসি, এটুকু বুঝিতে বিলম্ব হয় না, কিন্তু কৌতুকে হাসি কেন। কৌতুক তো ঠিক সুখ নয়। মোটা মানুষ চৌকি ভাঙিয়া পড়িয়া গেলে আমাদের কোনো সুখের কারণ ঘটে, এ-কথা বলিতে পারি না, কিন্তু হাসির কারণ ঘটে ইহা পরীক্ষিত সত্য। ভাবিয়া দেখিলে ইহার মধ্যে আশ্চর্যের বিষয় আছে।”

 ক্ষিতি কহিল, “কথাটা এই যে কৌতুকে আমরা হাসি কেন। একটা কিছু ভালো লাগিবার বিষয় যেই আমাদের সম্মুখে উপস্থিত হইল, অমনি আমাদের গলার ভিতর দিয়া একটা অদ্ভুত প্রকারের শব্দ বাহির হইতে লাগিল এবং আমাদের মুখের সমস্ত মাংসপেশী বিকৃত হইয়া সম্মুখের দন্তপঙক্তি বাহির হইয়া পড়িল— মানুষের মতো ভদ্র জীবের পক্ষে এমন একটা অসংযত অসংগত ব্যাপার কি সামান্য অদ্ভুত এবং অবমানজনক। য়ুরোপের ভদ্রলোক ভয়ের চিহ্ন দুঃখের চিহ্ন প্রকাশ করিতে লজ্জা বোধ করেন, আমরা প্রাচ্যজাতীয়েরা সভ্যসমাজে কৌতুকের চিহ্ন প্রকাশ করাটাকে নিতান্ত অসংযমের পরিচর জ্ঞান করি—”

 সমীর ক্ষিতিক কথা শেষ করিতে না দিয়া কহিল, “তাহার কারণ, আমাদের মতে কৌতুকে আমোদ অনুভব করা নিতান্ত অযৌক্তিক। উহা ছেলেমানুষেরই উপযুক্ত। এইজন্য কৌতুকরসকে আমাদের প্রবীণ লোকমাত্রেই ছেবলামি বলিয়া ঘৃণা করিয়া থাকেন। একটা গানে শুনিয়াছিলাম, শ্রীকৃষ্ণ নিদ্রাভঙ্গে প্রাতঃকালে হুঁকা-হস্তে রাধিকার