পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৌতুকহাস্যের মাত্রা
২১৫

ব্যক্তি খেমটা-নাচ নাচিতেছে, তবে সেটা প্রকৃতই অসংগত ঠেকে; কারণ, তাহা অনিবার্য নিয়মসংগত নহে। আমরা বৃদ্ধের নিকট কিছুতেই এরূপ আচরণ প্রত্যাশা করি না, কারণ, সে ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন লোক; সে ইচ্ছা করিয়া নাচিতেছে, ইচ্ছা করিলে না নাচিতে পারিত। জড়ের নাকি নিজের ইচ্ছামতো কিছু হয় না, এইজন্য জড়ের পক্ষে কিছুই অসংগত কৌতুকাবহ হইতে পারে না। এইজন্য অনপেক্ষিত হঁচট বা দুর্গন্ধ হাস্যজনক নহে। চায়ের চামচ যদি দৈবাৎ চায়ের পেয়ালা হইতে চ্যুত হইয়া দোয়াতের কালির মধ্যে পড়িয়া যায় তবে সেটা চামচের পক্ষে হাস্যকর নহে— ভারাকর্ষণের নিয়ম তাহার লঙ্ঘন করিবার জো নাই; কিন্তু অন্যমনস্ক লেখক যদি তাঁহার চায়ের চামচ দোয়াতের মধ্যে ডুবাইযা চা খাইবার চেষ্টা করেন, তবে সেটা কৌতুকের বিষয় বটে। ধর্মনীতি যেমন জড়ে নাই, অসংগতিও সেইরূপ জড়ে নাই। মনঃপদার্থ প্রবেশ করিয়া যেখানে দ্বিধা জন্মাইয়া দিয়াছে, সেইখানেই উচিত এবং অনুচিত, সংগত এবং অদ্ভূত।

 কৌতুহল জিনিসটা অনেক স্থলে নিষ্ঠুর, কৌতুকের মধ্যেও নিষ্ঠুরতা আছে। সিরাজদ্দৌলা দুইজনের দাড়িতে দাড়িতে বাঁধিয়া উভয়ের নাকে নস্য পুরিয়া দিতেন। এইরূপ প্রবাদ শুনা যায়— উভয়ে যখন হাঁচিতে আরম্ভ করিত তখন সিরাজদ্দৌলা আমোদ অনুভব করিতেন। ইহার মধ্যে অসংগতি কোন্‌খানে। নাকে নস্য দিলে তো হাঁচি আসিবারই কথা। কিন্তু এখানেও ইচ্ছার সহিত কার্যের অসংগতি। যাহাদের নাকে নস্য দেওয়া হইতেছে তাহাদের ইচ্ছা নয় যে তাহারা হাঁচে, কারণ, হাঁচিলেই তাহাদের দাড়িতে অকস্মাৎ টান পড়িবে; কিন্তু তথাপি তাহাদিগকে হাঁচিতেই হইতেছে।

 এইরূপ ইচ্ছার সহিত অবস্থার অসংগতি, উদ্দেশ্যের সহিত উপায়ের অসংগতি, কথার সহিত কার্যের অসংগতি, এগুলোর মধ্যে নিষ্ঠুরতা