পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নববর্ষা

 আষাঢ়ের মেঘ প্রতি বৎসর যখনি আসে, তখনি নূতনত্বে রসাক্রান্ত ও পুরাতনত্বে পুঞ্জীভূত হইয়া আসে। তাহাকে আমরা ভুল করি না, কারণ, সে আমাদের ব্যবহারের বাহিরে থাকে। আমার সংকোচের সঙ্গে সে সংকুচিত হয় না।

 মেঘে আমার কোনো চিহ্ন নাই। সে পথিক, আসে যায়, থাকে না। আমার জরা তাহাকে স্পর্শ করিবার অবকাশ পায় না। আমার আশানৈরাশ্য হইতে সে বহুদূরে।

 এইজন্য, কালিদাস উজ্জয়িনীর প্রাসাদশিখর হইতে যে-আষাঢে মেঘ দেখিয়াছিলেন আমরাও সেই মেঘ দেখিয়াছি, ইতিমধ্যে পরিবর্তমান মানুষের ইতিহাস তাহাকে স্পর্শ করে নাই। কিন্তু সে-অবন্তী, সে-বিদিশা কোথায়। মেঘদূতের মেঘ প্রতিবৎসর চিরনূতন চিপুরাতন হইয়া দেখা দেয়, বিক্রমাদিত্যের যে-উজ্জয়িনী মেঘের চেয়ে দৃঢ় ছিল, বিনষ্টস্বপ্নের মতো তাহাকে আর ইচ্ছা করিলে গড়িবার জো নাই।

 মেঘ দেখিলে ‘সুখিনোঽপন্যথাবৃত্তিচেতঃ’, সুখীলোকেরও আন্‌মনা ভাব হয় এইজন্যই। মেঘ মনুষ্যলোকের কোনো ধার ধারেনা বলিয়া মানুষকে অভ্যস্ত গণ্ডীর বাহিরে লইয়া যায়। মেঘের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের চিন্তা-চেষ্টা-কাজকর্মের কোনো সম্বন্ধ নাই বলিয়া সে আমাদের মনকে ছুটি দেয়। মন তখন বাঁধন মানিতে চাহে না, প্রভুশাপে নির্বাসিত যক্ষের বিরহ তখন উদ্দাম হইয়া উঠে। প্রভুভৃত্যের সম্বন্ধ সংস্কারের সম্বন্ধ; মেঘ সংসারের এই প্রয়োজনীয় সম্বন্ধগুলাকে ভুলাইয়া দেয়, তখনি হৃদয় বাঁধ ভাঙিয়া আপনার পথ বাহির করিতে চেষ্টা করে।

 মেঘ আপনার নিত্যনূতন চিত্রবিন্যাসে, অন্ধকারে, গর্জনে বর্ষণে,