পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪৬
সংকলন

 আজ ধূসর সন্ধ্যায় একবার পিছন ফিরে তাকালুম; দেখলুম, এই পথটি বহুবিস্মৃত পদচিহ্নের পদাবলী, ভৈরবীর সুরে বাঁধা।

 যতকাল যত পথিক চলে গেছে তাদের জীবনের সমস্ত কথাকেই এই পথ আপনার একটিমাত্র ধূলিরেখায় সংক্ষিপ্ত করে এঁকেছে; সেই একটি রেখা চলেছে সূর্যোদয়ের দিক থেকে সূর্যাস্তের দিকে— এক সোনার সিংহদ্বার থেকে আর-এক সোনার সিংহদ্বারে।

 “ওগো পায়ে-চলার পথ, অনেক কালের অনেক কথাকে তোমার এই ধূলিবন্ধনে বেঁধে নীরব করে রেখো না। আমি তোমার ধুলোয় কান পেতে আছি, আমাকে কানে কানে বলো।”

 পথ নিশীথের কালো পর্দার দিকে তর্জনী বাড়িয়ে চুপ করে থাকে।

 “ওগো পায়ে-চলার পথ, এত পথিকের এত ভাবনা, এত ইচ্ছা, সে-সব গেল কোথায়।”

 বোবা পথ কথা কয় না। কেবল সূর্যোদয়ের দিক থেকে সূর্যাস্তের দিক পর্যন্ত ইশারা মেলে রাখে।

 “ওগো পায়ে-চলার পথ, তোমার বুকের উপর যে-সমস্ত চরণপাত একদিন পুষ্পবৃষ্টির মতো পড়েছিল, আজ তারা কি কোথাও নেই।”

 পথ কি নিজের শেষকে জানে, যেখানে সমস্ত লুপ্ত ফুল আর স্তব্ধ গান পৌঁছল— যেখানে তারার আলোয় অনির্বাণ বেদনার দেয়ালি-উৎসব হচ্ছে?

 আষাঢ়, ১৩২৬