পাতা:সংকলন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শ্রাবণসন্ধ্যা
২৭৩

একজনের সঙ্গে আর-একজন বাঁধা থেকে দিনরাত্রি কেবল, বোবার মতো কাজ করে যাচ্ছে— তারাই। যেই তাদের শিকলের শব্দ আমাদের হৃদয়ের ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করে অমনি দেখতে পাই, এ-যে বিরহের বেদনাগান, এ-যে মিলনের আহ্বানসংগীত। যে-সব খবরকে কোনো ভাষা দিয়ে বলা যায় না, সে-সব খবরকে এবাই তো চুপিচুপি বলে যায় এবং মানুষ কবি সেইসব খবরকেই গানের মধ্যে কতকটা কথায় কতকটা সুরে বেঁধে গাইতে থাকে—

ভরা বাদর, মাহ ভাদর,
শূন্য মন্দির মোর।

 আজ কেবলই মনে হচ্ছে, এই-যে বর্ষা, এ-তো এক সন্ধ্যাব বর্ষা নয়, এ যেন আমার সমস্ত জীবনের অবিরল শ্রাবণধারা। যতদূর চেয়ে দেখি, আমার সমস্ত জীবনের উপরে সঙ্গীহীন বিরহসন্ধ্যার নিবিড় অন্ধকার— তারই দিগ্‌দিগন্তরকে ঘিবে অশ্রান্ত শ্রাবণের বর্ষণে প্রহরের পর প্রহর কেটে যাচ্ছে; আমার সমস্ত আকাশ ঝর্‌ঝর্ করে বলছে—কৈসে গোঙায়বি হরি বিনে দিনরাতিয়া। তবু এই অন্ধকারের, এই শ্রাবণের বুকের মধ্যে একটি নিবিড় রস অত্যন্ত গোপনে ভরা রয়েছে; একটি কোন্ বিকশিত বনের সজল গন্ধ আসছে, এমন একটি অনির্বচনীয় মাধুর্য যা যখনি প্রাণকে ব্যথায় কাঁদিয়ে তুলছে তখনি সেই বিদীর্ণ ব্যথার ভিতর থেকে অশ্রুসিক্ত আনন্দকে টেনে বের করে নিয়ে আসছে।

 বিরহসন্ধ্যার অন্ধকারকে যদি শুধু এই ব’লে কাঁদতে হ’ত যে, কেমন ক’রে তোর দিনবাত্রি কাটবে— তাহলে সমস্ত রস শুকিয়ে যেত এবং আশার অঙ্কুর পর্যন্ত বাঁচত না; কিন্তু শুধু কেমন ক’রে কাটবে নয় তো কেমন ক’রে কাটবে হরি বিনে দিনরাতিয়া—সেইজন্যে ‘হরি বিনে’ কথাটাকে ঘিরে ঘিরে এত অবিরল অজস্র