য়ুরোপযাত্রী
২২ আগস্ট, ১৮৯১। তখন সূর্য অস্তপ্রায়। জাহাজের ছাদের উপর হালের কাছে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের তীরের দিকে চেয়ে রইলুম। সমুদ্রের জল সবুজ, তীরের রেখা নীলাভ, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সন্ধ্যা রাত্রির দিকে এবং জাহাজ সমুদ্রের মধ্যে ক্রমশই অগ্রসর হচ্ছে। বামে বোম্বাই বন্দরের এক দীর্ঘরেখা এখনো দেখা যাচ্ছে; দেখে মনে হল, আমাদের পিতৃপিতামহের পুরাতন জননী সমুদ্রের বহুদূর পর্যন্ত ব্যাকুলবাহু বিক্ষেপ করে ডাকছেন, বলছেন, “আসন্ন রাত্রিকালে অকুল সমুদ্রে অনিশ্চিতের উদ্দেশে যাস্ নে; এখনো ফিরে আয়।”
ক্রমে বন্দর ছাড়িয়ে গেলুম। সন্ধ্যার মেঘাবৃত অন্ধকারটি সমুদ্রের অনন্তশয্যায় দেহ বিস্তার করলে। আকাশে তারা নেই। কেবল দূরে লাইট-হাউসের আলো জ্বলে উঠল; সমুদ্রের শিয়রের কাছে সেই কম্পিত দীপশিখা যেন ভাসমান সন্তানদের জন্যে ভূমিমাতার আশঙ্কাকুল জাগ্রত দৃষ্টি।
তখন আমার হৃদয়ের মধ্যে ঐ গানটা ধ্বনিত হতে লাগল: সাধের তরণী আমার কে দিল তরঙ্গে।
জাহাজ বোম্বাই বন্দর পার হয়ে গেল।
ভাসল তরী সন্ধেবেলা, ভাবিলাম এ জলখেলা,
মধুর বহিবে বায়ু ভেসে যাব রঙ্গে।
কিন্তু সী-সিক্নেসের কথা কে মনে করেছিল!